আর্কাদি গাইদার
সপ্তম পরিচ্ছেদ
একদিন তখন সেপ্টেম্বর মাস পড়ে গেছে ফেক্কা আমার সঙ্গে বেশ রাত পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে রইল। একসঙ্গে আমরা ক্লাসের পড়া তৈরি করছিলুম সেদিন।
আমরা সবে কাজ শেষ করেছি, বাড়ি যাবে বলে ফেদকা বই গুছোচ্ছে, এমন সময় জোর বৃষ্টি নামল।
বাগানের দিকের জানলাটা বন্ধ করতে দৌড়লুম আমি।
দমকা বাতাসে রাশি রাশি শুকনো করা পাতা উড়তে লাগল। বৃষ্টির কয়েকটা বড় বড় ফোঁটা আমার মুখে পড়ল।
জানলার একটা পাল্লা শার্সি অনেক কষ্ট করে টেনে বন্ধ করলুম। আরেকটা পাল্লা টানব বলে জানলা দিয়ে ঝু’কতেই একটা বেশ বড় মাটির ঢেলা জানলার তাকে এসে পড়ল। আমি ভাবলুম, ‘ঝড় বটে একখানা! গাছটাছ সব মড়মড়িয়ে না ভাঙে এবার।’
ফিরে এসে ফেক্কাকে বললুম:
‘বাইরে রীতিমতো ঝড় হচ্ছে রে। এখন চলিল কোথায়, বোকা গাধা? ঝমঝমিয়ে বিষ্টি নেমেছে! দেখছিস এই মাটির টুকরোটা? হাওয়ার চোটে উড়ে এসে জানলার ভেতরে পড়ল।’
ঢেলাটার দিকে ফেক্কা কিন্তু সন্দেহের চোখে তাকাল।
‘বানিয়ে বলার আর জায়গা পাস না? অত বড় ঢেলাটা হাওয়ার চোটে উড়ে এসে ঘরে পড়ল?’
‘ভাবছিস গুল্ মারছি?’ চটে উঠে বললুম। ‘বলছি না? জানলাটা বন্ধ করছি এমন সময়ে ঠক করে জানলার তাকের ওপর এসে পড়ল।’
মাটির ঢেলাটার দিকে আরেকবার তাকালুম। আচ্ছা, বাইরে থেকে কোনো লোক দুষ্টুমি করে এটা ছোড়ে নি তো? কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সন্দেহটা মন থেকে দূর করে দিয়ে বললুম:
‘দুদূর, বাজে কথা! ঢেলা আবার কে ছুড়তে যাবে? এই দুর্যোগে বাগানে আবার কে থাকতে যাবে? নিশ্চয়ই বাতাসের ঝাপ্টায় এসেছে।’
মা ছিলেন পাশের ঘরে। সেলাই করছিলেন। ছোট বোন ঘুমোচ্ছিল। ফেক্কা বসে রইল আরও আধঘণ্টা। তারপর আকাশ পরিষ্কার হল। জানলার ভিজে শার্সি ভেদ করে চাঁদ উ’কি দিল ঘরে। বাতাসের দাপটও এল কমে।
Leave a Reply