আর্কাদি গাইদার
সপ্তম পরিচ্ছেদ
‘এবার চলি,’ বলল ফেদকা।
‘ঠিক আছে। আমি আর দরজা বন্ধ করতে যাচ্ছি না, বুঝলি। তুই খালি দরজাটা টেনে ভেজিয়ে দিয়ে যা। আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে’খন।’
মাথায় টুপি চড়িয়ে, বইগুলো যাতে জলে ভিজে না যায় সেজন্যে কোটের ভেতর পুরে নিয়ে ফেকা চলে গেল। সদর দরজা বন্ধ করার আওয়াজে বুঝলুম ও বেরিয়ে গেল।
শুতে যাব বলে জুতো ছাড়তে লাগলুম। মেঝের দিকে তাকিয়ে দেখি, ফেদুকা ভুলে ওর একখানা এক্সারসাইজ খাতা ফেলে চলে গেছে। ও মা, এ তো দেখি যে খাতায় আমরা অঙ্ক কষছিলুম সেই খাতাখানাই।
‘দেখেছ কান্ড, আচ্ছা আহাম্মক তো!’ মনে মনে ভাবলুম। ‘কাল আমাদের প্রথম পিরিয়ডেই অ্যালজেব্রার ক্লাস। খাতাখানা আমায় সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে দেখছি।’
জামাকাপড় ছেড়ে কম্বলের নিচে ঢুকে পড়লুম। পাশ ফিরে ঘুমোবার উদ্যোগ করতে যাচ্ছি এমন সময় সদর দরজায় ঘণ্টা বেজে উঠল। কে যেন আন্তে, সাবধানে ঘণ্টা বাজাল।
মা অবাক হলেন, ‘এ-সময়ে কে এল আবার? কত্তার টেলিগ্রাম নয় তো? না বোধহয়। ডাকপিওন তো সব সময়ে জোরসে ঘণ্টাটা বাজায়। যাও, দোরটা খুলে দ্যাখো দেখি, কে।’
‘জামাকাপড় খুলে ফেলেছি যে। এ নিশ্চয়ই ফেক্কা। ওর এক্সারসাইজ খাতাখানা ভুলে ফেলে গিয়েছিল। বাড়ি ফেরার পথে হয়তো মনে পড়েছে, তাই। কাল ওর দরকার হবে কিনা।’
মা বললেন, ‘জালিয়ে মারলে! কাল সকালে এলে চলত না? কই, খাতাখানা কোথায়?’
এক্সারসাইজ খাতাখানা হাতে নিয়ে, খালি পায়ে স্লিপার গলিয়ে মা দরজা খুলতে গেলেন।
সিড়ি দিয়ে নামছেন মা। তাঁর স্লিপারের আওয়াজ পাচ্ছি। তারপর দরজা খোলার শব্দ। আর সঙ্গে সঙ্গেই চাপা গলায় একটা চিৎকার কানে এল। বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে উঠলুম। এক মুহূর্ত মনে হল, চোরডাকাত নয় তো? টেবিল থেকে একটা বাতিদান তুলে নিলুম। ভাবছি, জানলার শার্সি ভেঙে পাড়াপড়শির সাহায্যের জন্যে চে’চাব। এমন সময় একতলা থেকে হাসি কিংবা চুমো খাওয়ার শব্দ আর চাপা গলায় কথার আওয়াজ কানে এল। তারপরই শুনলুম দু-জোড়া পা ঘটাতে ঘস্টাতে সি’ড়ি বেয়ে উঠে আসছে।
Leave a Reply