আর্কাদি গাইদার
সপ্তম পরিচ্ছেদ
দরজা খুলে গেল। হাতে বাতিদান, জামাকাপড় খোলা অবস্থায় বিছানায় আমি তখন আঠার মতো সে’টে বসে আছি।
দেখি, দোরগোড়ায় চোখভরা জল আর মুখে সুখের হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মা। আর তাঁর পাশে মুখময় খোঁচা-খোঁচা দাড়ি, সারা গায়ে কাদামাখা আর টুপটুপে ভেজা পোশাক-পরা দুনিয়ায় আমার সব থেকে প্রিয় সৈনিক, আমার বাবা দাঁড়িয়ে।
এক লাফে তাঁর শক্ত হাতের আলিঙ্গনের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়লুম আমি।
এই গোলমালে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় পার্টিশনের ওধারে আমার বোন তার বিছানায় নড়ে উঠল। ছুটে গিয়ে তাকে জাগাতে চাইলুম আমি, কিন্তু বাবা আমায় থামিয়ে দিলেন। চাপা গলায় বললেন:
‘থাক, বরিস… ওকে জাগিও না… আর, বেশি গোলমাল কোরো না এখন।
মায়ের দিকে ফিরে বললেন:
‘ভারিয়া, বাচ্চা জেগে উঠলে ওকে বোলো না আমি ফিরেছি। ও ঘুমোক। আচ্ছা, দিন দুয়েকের জন্যে ওকে কোথায় পাঠানো যায় বল তো?’
‘কাল সকালে খুব ভোর-ভোর ওকে ইভানোস্কোয়ে পাঠিয়ে দেব’খন,’ মা বললেন, ‘অনেক দিন ধরেই ও দিদিমার কাছে গিয়ে থাকতে চাইছে। আকাশটা, মনে হচ্ছে, পরিষ্কার হয়েছে। বরিস ভোরবেলায় উঠে প্রথমেই ওকে পৌঁছে দিয়ে আসবে। ফিসফিস করে কথা বলার দরকার নেই, আলেক্সেই। মেয়েটার ঘুম খুব গাঢ়। অনেক সময় রাত্রে হাসপাতাল থেকে আমাকে ডাকতে লোকজন আসে। ও এতে অভ্যন্ত।’
হাঁ করে দাঁড়িয়ে রয়েছি আমি। যা শুনছি তা যেন ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছি না।
ভাবছি, ‘কী ব্যাপার?.. গোল-চোখো ছোট্ট তানিয়াটাকে বাবা-মা ভোর হতে-না- হতে দিদিমার কাছে চালান করে দিতে চাইছে যাতে ও বাপিকে দেখতে না পায়। বাপি তো ছুটিতে এসেছে। তাহলে? এর মানে কী?’
‘তুমি আমার ঘরে শুতে যাও, বরিস,’ মা বললেন, ‘আর কাল সকালে ছ-টা নাগাদ তানিয়াকে দিদিমার কাছে নিয়ে যাবে কিন্তু। আর শোনো, ওখানে যেন কাউকে বোলো না যে বাপি বাড়ি এসেছেন।’
Leave a Reply