আর্কাদি গাইদার
সপ্তম পরিচ্ছেদ
এবার নিজেই বললুম, ‘য়্যার হাট (তার আছে)।’ তারপর ‘ভির (আমাদের)। আবার হোঁচট। জার্মান ক্রিয়াপদে সেদিন কিছুতেই মন বসছিল না।
এমন সময় পেছন থেকে কে যেন শয়তানি করে বললে, ‘হাস্স্ট্রস’।
সঙ্গে সঙ্গে কিছু না-ভেবেচিন্তে আমিও পুনরাবৃত্তি করলুম, ‘হাস্ট্রস’।
‘কী আবোলতাবোল বকছ? মনটা কোনদিকে আছে শুনি? বোকা ছেলেটার কথায় কান না দিয়ে নিজের মাথাটা একটু খাটাও না। কই, তোমার এক্সারসাইজ খাতাটা দাও দেখি।’
‘আনতে ভুলে গেছি, এল্সা ফ্রান্সিস্কোভনা। বাড়ির কাজ করেছি, কিন্তু বইখাতা আনতে ভুলে গেছি। খেলার পিরিয়ডে বাড়ি গিয়ে ঠিক নিয়ে আসব।’
‘একসঙ্গে সব বইখাতা আনতে ভোলো কী করে?’ শিক্ষিকা চটে উঠে বললেন। ‘নিশ্চয় ভোলো নি তুমি। আমাকে ঠকানোর মতলব করেছ। ইশকুল ছুটির পর আজ এক ঘণ্টা আটক থাকবে।’
‘এপ্সা ফ্রান্সিসকোনা, ইনস্পেক্টর আজ ইশকুল ছুটির পর আমায় দু-ঘণ্টা আটক থাকার শাস্তি দিয়েছেন। আপনিও এক ঘণ্টা আটক থাকতে বলছেন। আমি কি তবে সারা রাত ইশকুলে বসে থাকব?’ আমি আপত্তি জানিয়ে বললুম।
উত্তরে শিক্ষিকাটি আবার এক লম্বা-চওড়া জার্মান বাক্য আওড়ালেন। যার সার কথা আমি অবিশ্যি যতটুকু বুঝলুম তা এই যে আল্সেমি আর মিথ্যে কথা বলার জন্যে শাস্তি পেতেই হবে আর ভালো করে বুঝলুম যে এই তৃতীয় ঘণ্টা আটক থাকার হাত থেকে রেহাই নেই।
মাঝের বিরতির সময় ফেকা কাছে এল।
‘তুই বইপত্তর ছাড়াই ইশকুলে এলি যে বড়? সেমিওনই বা তোকে ক্লাসে নিয়ে এল কেন?’
যা হোক একটা কৈফিয়ত বানিয়ে বললুম ওকে। এরপর ছিল সেদিনের শেষ ক্লাস- ভূগোলের। ক্লাসটায় সারাক্ষণ ঘুম-ঘুম ভাব নিয়ে বসে রইলুম। মাস্টারমশাই যে কী বললেন, ছাত্ররা যে কে কী উত্তর দিল কিছুই মাথায় ঢুকল না আমার। ইশকুলের ছুটির ঘণ্টা বাজতে শুরু করল যখন, কেবল তখনই আমার চমক ভাঙল।
Leave a Reply