আর্কাদি গাইদার
সপ্তম পরিচ্ছেদ
যে ভাবা সেই কাজ। এক দৌড়ে জামাকাপড়ের ঘরে গিয়ে কোটটা গায়ে চড়িয়ে ফের একছুটে একেবারে রাস্তায়। বেরোবার সময় সজোরে দড়াম করে দরজাটা দিলুম বন্ধ করে।
ওইদিন সন্ধেয় অনেক ব্যাপারে বাবা আমার চোখ খুলে দিতে চেষ্টা করলেন।
‘আচ্ছা, বাপি, ফ্রন্ট থেকে পালাবার আগে তুমি তো বেশ সাহসী লোক ছিলে, তাই না?’ বললুম আমি। ‘তুমি ভয় পেয়েছিলে বলে পালাও নি তো?’
‘আমি এখনও ভিতু নই, বাবা,’ শান্তভাবে বাবা বললেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে কেন জানি আমার চোখ দুটো চলে গেল জানলার দিকে আর আমি চমকে উঠলুম।
দেখলুম, রাস্তার ওপার থেকে একজন পুলিস সোজা আমাদের বাড়ির দিকে আসছে। লোকটা আস্তে-ধীরে হেলে-দুলে এগুচ্ছে দেখলুম। রাস্তার মাঝামাঝি এসে সে হঠাৎ ডানদিকে ফিরল, তারপর বাজারের দিকে হেটে চলে গেল।
‘নাঃ, ও… এখানে আসছে না,’ দমকে দমকে বললুম আমি, প্রায় প্রতিটি অক্ষরে থেমে থেমে। ভয়ানক হাঁপাচ্ছিলুম।
পরদিন সন্ধেয় বাবা আমাকে বললেন:
‘বরিস, বাড়িতে যে-কোনোদিন কেউ-না-কেউ এসে পড়তে পারে। তোমাকে যে খেলনাটা পাঠিয়েছি ওটা ভালো জায়গায় লুকিয়ে রেখো। আর মনে সাহস রেখো! তুমি এখন আর বাচ্চা নও দ্যাখো, কত বড়টি হয়ে উঠেছ তুমি! আমার জন্যে ইশকুলে যদি কোনো ঝামেলায় পড়, কিছু মনে কোরো না, কেমন? আর, কিছুতে ভয় পেয়ো না যেন। চারপাশে কী ঘটছে ভালো করে নজর রেখো, তাহলেই আমি তোমাকে যা বলেছি তার মানে বুঝতে পারবে।’
তোমার সঙ্গে আবার তো দেখা হবে, বাপি, তাই না?’
‘হ্যাঁ। মাঝে মাঝে আসব বই কি, তবে এ-বাড়িতে নয়।’
‘ভবে? কোথায়?’
‘সময় হলেই জানতে পারবে।’
ইতিমধ্যেই চারিদিক অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পাড়ার মুচি আমাদের বাড়ির গেটের পাশে তার হারমনিয়ম-বাজনাটা বাজাচ্ছিল বসে। আর ওকে ঘিরে একপাল ছেলেমেয়ে হৈ-হল্লা জুড়ে দিয়েছিল।
Leave a Reply