নিকোলাস বারবার
ইশিরো হন্ডার ১৯৫৪ সালের উল্লেখযোগ্য মনস্টার মুভি গডজিলা জাপানের একটি জাতীয় বিপর্যয় থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত হয়েছিল। এটি শুধু চলচ্চিত্রের সৌন্দর্যের বাইরে, মানবজাতির জন্য একটি গভীর এবং অন্ধকার বার্তা বহন করে।
গডজিলাকে অনেকে হয়তো আজকের পিঙ্ক-ফিনড সুপারহিরো হিসেবে চেনে, যিনি কিং কং-এর সঙ্গে লড়াই করেছেন। তবে ১৯৫৪ সালে এই চরিত্রটি প্রথম আত্মপ্রকাশ করেছিল একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে। এটি ছিল পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞের নির্মম প্রতীক, যা এখনো সবচেয়ে অন্ধকার ও গম্ভীর মনস্টার মুভি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
গডজিলার মূল ধারণাটি আসে ১৯৪৫ সালের আগস্টে, যখন হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে মার্কিন পরমাণু বোমা বিস্ফোরণে ১,৫০,০০০-এরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। এটি একমাত্র জাপানই অনুভব করতে পেরেছিল, কারণ এটি ছিল পারমাণবিক হামলার সরাসরি শিকার হওয়া একমাত্র দেশ।
তবে এর মূলে আরও একটি ঘটনা জড়িত। ১৯৫৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থার্মোনিউক্লিয়ার পরীক্ষার সময়, একটি জাপানি মাছ ধরার নৌকা “লাকি ড্রাগন ফাইভ” বিকিরণের শিকার হয়। এই ঘটনাটি জাপানিদের বুঝিয়ে দেয় যে বিদেশি শক্তির তৈরি বিকিরণ তাদের দেশেও ফিরে আসতে পারে।
টমোইউকি তানাকা, তোহো স্টুডিওর একজন প্রযোজক, এই সত্যিকারের ভয়ের অভিজ্ঞতাকে এক বিশালাকার মনস্টারের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার ধারণা দেন। গডজিলার চরিত্রটি শুধু পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ নয়, বরং এটি মানবজাতির আত্মবিধ্বংসী প্রকৃতির প্রতীক।
গডজিলা মূলত সমুদ্রের গভীরে লুকানো একটি প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসর, যা পারমাণবিক পরীক্ষার কারণে রূপান্তরিত হয়ে প্রায় ধ্বংসাত্মক এক দানবে পরিণত হয়েছে। এটি টোকিওকে ধ্বংস করে, তার লেজ দিয়ে শহর ধ্বংস করে এবং তার “রেডিওএকটিভ নিঃশ্বাস” দিয়ে আগুন লাগায়।
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা ইশিরো হন্ডা ১৯৪৫ সালে চীনে বন্দি থাকা অবস্থায় হিরোশিমার ধ্বংসস্তূপ দেখেছিলেন। তার অভিজ্ঞতা তাকে গডজিলার ধ্বংসযজ্ঞের দৃশ্যগুলো আরও বাস্তবভাবে ফুটিয়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করে।
গডজিলা শুধুমাত্র একটি মনস্টার মুভি নয়; এটি একটি সতর্কবার্তা। এর কেন্দ্রীয় প্রশ্ন: আমরা কি নিজেদের অস্ত্র শক্তিকে আরও শক্তিশালী করতে থাকব, জেনে যে এটি আমাদের আরও বেশি ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে?
ড. সেরিজাওয়া নামের একজন বিজ্ঞানী, যিনি “অক্সিজেন ডেস্ট্রয়ার” নামে একটি মারাত্মক অস্ত্র তৈরি করেন, এই দ্বিধার প্রতীক। যদিও তিনি গডজিলাকে ধ্বংস করার জন্য এটি ব্যবহার করতে সম্মত হন, তিনি তার নোট পুড়িয়ে ফেলেন এবং নিজেও আত্মহত্যা করেন।
১৯৫৪ সালের চলচ্চিত্রটি একটি যুগান্তকারী কাজ। এরপর ৩৩টি জাপানি গডজিলা চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলো মজাদার এবং সাহসী নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছে। তবে ২০১৬ সালের “শিন গডজিলা” এবং ২০২৩ সালের “গডজিলা মাইনাস ওয়ান” আবারও মূল চলচ্চিত্রের গম্ভীর সুরটি পুনরুজ্জীবিত করেছে।
গডজিলা এখন শুধু পারমাণবিক অস্ত্রের বিপদ নয়, বরং দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত ভোক্তাবাদবিরোধী একটি প্রতীক। এটি একটি চরিত্র যা সময়ের সঙ্গে বিভিন্ন অর্থ এবং প্রসঙ্গ পেয়েছে।
“গডজিলা” চলচ্চিত্রটি এখনও একটি চেতনাবোধ জাগ্রত করে। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, “আমরা নিজেরাই আমাদের ধ্বংসের কারণ।”
Leave a Reply