ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
এই বিশেষ উৎসবের দিনে আজকের মায়ারাও তাঁদের শ্রদ্ধার বেদী বা মিনার তৈরি করে। এই বেদী বা মিনারকে এমনসব জিনিস দিয়ে সাজায় যা পূর্বপুরুষদের কাছে খুব পছন্দের ছিল। এইসব প্রিয় জিনিসের মধ্যে ছিল নানা রকমের খাবার, ফুল এবং অন্যান্য নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য যা মৃতরা তাদের জীবিতকালে খুব ভালবাসত।
এসব লোকাচার, লোক-উৎসব করার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল পূর্বপুরুষদের সন্তুষ্ট করা এবং তাদের আত্মা যে এই স্মরণ অনুষ্ঠানে ফিরে আসে সেই বিষয়টিকে সুনিশ্চিত করা। মৃতদের দিন উৎসবটিকে বর্তমান প্রজন্মের মায়ারা একটি সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবে দেখে এবং এর মধ্য থেকে একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক দায়িত্ববোধের ব্যঞ্জনা গড়ে ওঠে।
উৎসবের আরেকটি দিক উজ্জ্বল হয়ে আছে বর্ষপঞ্জী বা ক্যালেন্ডারের সঙ্গে যুক্ত লোক-অনুষ্ঠানকে ঘিরে। মায়া জনসমাজের বর্ষপঞ্জী বা ক্যালেন্ডার (পূর্ববর্তী অধ্যায়ে আলোচিত) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই ক্যালেন্ডার তৈরি করার বিশেষ কৌশল ছিল নিজস্ব ঘরনায় সমৃদ্ধ এবং এই ক্ষেত্রে গণিতশাস্ত্র এবং তার চর্চা প্রয়োগ করত। এই বর্ষপঞ্জীর নাম ২৬০ দিনের এক উৎসব।
এই উৎসবে পুরোহিতদের গুরুত্ব খুব বেশি ছিল। পুরোহিত এবং লেখক (Scribes) নিজেদের শাস্ত্র-পাণ্ডিত্য লোক-উৎসবের মধ্যে ব্যবহার করত। এই উৎসব অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষরাও তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী অংশগ্রহণ করতে পারত। বর্ষপঞ্জী বা ক্যালেন্ডারের কাজে তারা জ্যোতির্বিদ্যার জ্ঞানও কাজে লাগাত।
(চলবে)
Leave a Reply