শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪০ পূর্বাহ্ন

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-৭৮)

  • Update Time : বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪, ১১.০০ এএম

চৈত্র-পুজা

আমাদের বাড়ির পাশের ছোট গাঙের ওপারে শোভারামপুর গ্রামে হিন্দুরা চৈত্র-পূজা করিত।

এই পূজা উপলক্ষ করিয়া চৈত্রমাসের পনরো দিন যাইতেই ভাঙরা নাচের দল লইয়া হিন্দুরা গ্রামে গ্রামে গান গাহিয়া বেড়াইত। তারপর চৈত্র-সংক্রান্তির দিন শোভারামপুরের মেলা বা আড়ং বসিত। এই মেলা আমার শিশু বয়সে বড়ই আকর্ষণের বস্তু ছিল। সেখানে যাইয়া মাটির পুতুল, ঘোড়া, লাল বাতাসা, চিনির সাজ প্রভৃতিই শুধু কিনিয়া আনিতাম না, সেই মেলায় যে ভাঙরা নাচের অভিনয় হইত তাহা দেখিয়া আমার বড়ই ভাল লাগিত।

ব্রাহ্মণ, মোল্লা, বেদে-বেদেনি, জেলে-জেলেনি, বৈরাগী-বৈরাগিনী প্রভৃতি পাঠ অবলম্বন করিয়া গ্রাম্য-অভিনেতারা আপন-আপন চরিত্রগুলিকে সমালোচনায় উপহাসের পাত্র করিয়া সমবেত লোকদিগকে হাসাইয়া পাগল করিত। মোল্লার পাঠ লইয়া যে-ব্যক্তি আসরে আসিত, প্রথমেই সে আজান দিত:

হাইয়ালের ফালা হাইয়ালের ফালা, আমার ধান খাওয়ায় কোন শালার বেটা শালা।।

আল্লাহকবার। আল্লাহকবার!!

কানা মুরগি জবো কর।

এইভাবে আজন দেওয়া সারা হইলে মোল্লা সাহেব হাতের লাঠির উপর ভর দিয়া নাচিয়া নাচিয়া গান ধরিত:

‘মেজবানি খাইতে গেলাম চাচাজিগো বাড়িতি,

তারা, গোলমরিজদ্যা রাইন্দা ডাইল ডাইলা থুইছে খালুইতি।

শ্রোতাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল মুসলমান কিন্তু এরূপ গান শুনিয়া তাহারা কেহই বিক্ষুব্ধ হইত না।

সে একজন বিশেষ মোল্লা, তার জন্য গোলমরিচ দিয়া ডাল রাঁধিয়া খালুইতে ঢালিয়া রাখা যায়, এই কৌতুকময় রচনা শুনিয়া শ্রোতারা হাসিয়া গড়াইয়া পড়িত। তখনকার পরিবেশে এক সমাজের লোক অপর সমাজকে সমালোচনা করিলে সেই কৌতুক লোকে উপভোগ করিত। সমালোচকের প্রতি খড়গহস্ত হইত না। আমাদের জুলফক্কর মৃধা যাত্রাদলে প্রায়ই ভণ্ড ব্রাহ্মণের পাঠ করিত। বড় বড় অবস্থার হিন্দুরা তাহার অভিনয় দেখিয়া হাসিয়া ফাটিয়া পড়িত। জুলফক্কর হিন্দু না মুসলমান কেহই ভাবিত না।

চলবে…

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024