ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
বর্তমান মায়া সমাজে যেসব শিল্প সম্পর্কিত জীবিকাক্ষেত্র আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল খামার। খামারের মধ্যে রয়েছে বিন, কাকাও, শস্য, স্বনিযুক্তি, পরিবেশ-পর্যটন (Eco- tourism)। হস্তশিল্প, শিক্ষকতা, কাঠের শিল্প (Timber industry)। পশুপালন ও গবাদিপশু চাষের সম্ভাবনা বাজারের অভাবের জন্য সেইভাবে সফল হতে পারছে না।
তবে এই প্রসঙ্গে একথাও জানা প্রয়োজন উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মায়ার এখনো কিছুটা পিছিয়ে আছে এবং স্বনিযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও শিক্ষারও কিছুটা অভাব আছে। কাঠের শিল্প এখনো কাঙিক্ষত মাত্রায় উন্নত হতে পারেনি। এর অন্যতম কারণ হল করাত মিলগুলি সেইভাবে উন্নত করা যায়নি। মায়াদের বর্তমান জীবনদর্শন, দৃষ্টিভঙ্গী, মূল্যবোধ, আধ্যাত্মিক এবং মনোজগতের গুরুত্বকে ভিত্তি করে বজায় আছে।
জাগতিক লাভ লোকগানের হিসাব বা বস্তুগত সংস্কৃতির দিকে তাদের কোনো ঝোঁক নেই। এই মানসিকতা, মনোজগত অনেকটা ভারতীয় জীবনদর্শনের কাছাকাছি। ভারতীয় জীবনচর্চা, মূল্যবোধে যেমন ব্যক্তিচেতনায় ব্যক্তিকে জাহির করার চেয়ে আধ্যাত্মিক ও বৌদ্ধিকচর্চার গুরুত্ব বেশি স্বীকৃত, ঠিক তেমনি মায়া সমাজের মধ্যে এই মনোজগত এবং সবার স্বার্থে (altruism) দেখার গুরুত্বই স্বীকৃত। সময় ও সমাজের এই যান্ত্রিকতার যুগেও মায়া জনগোষ্ঠী নিজেদের ঐতিহ্যকে ভুলে যায়নি।
দৈনন্দিন জীবন, সমষ্টিগত জীবন, আর্থ-সামাজিক মেলামেশার মধ্যেও এই ঘরানা বাঁচিয়ে রাখার নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। মায়া সমাজ, সংস্কৃতি তার নিজস্ব সংস্কৃতির বর্ণময় চিত্র হারায়নি বলেই ইউরোপ সহ অন্যান্য দেশ এই সভ্যতাকে স্মরণ করে এবং অনুসন্ধান করে নতুনকে জানার স্বাদ গ্রহণ করে।
(চলবে)
Leave a Reply