শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৭ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন ঘিরে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, আইনজীবীর মৃত্যু

  • Update Time : বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২.০৫ পিএম
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে চট্টগ্রামের আদালত এলাকায় সমবেত হন তার অনুসারীরা

সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পর জামিন আবেদন ঘিরে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়ে অন্তত ২০ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আদালতে হাজির করার পর জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।

মি. দাসকে গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ভারত। গ্রেফতারের প্রতিবাদে কলকাতাতেও বিক্ষোভ হয়েছে।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আটকের বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন)। তিনি ‘বাংলাদেশে ইসকনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা’ উল্লেখ করে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

যদিও আটই নভেম্বর একটি সংবাদ সম্মেলনে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ইসকনের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়ার তথ্য জানিয়েছিল সংগঠনটি।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সোমবার ঢাকা থেকে গ্রেফতারের পর চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরে মহানগর আদালতে তার জামিনের শুনানির সময় নির্ধারিত ছিল।

সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গনে শত শত হিন্দু ধর্মাবলম্বী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে শুরু করে। পাশাপাশি আদালত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।

তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর আদালত চত্বরেই মি. দাসকে বহনকারী প্রিজন ভ্যানটি ঘিরে ধরে বিক্ষুব্ধরা।

এক পর্যায়ে প্রিজন ভ্যান থেকেই মি. দাস পুলিশের সরবরাহ করা হ্যান্ডমাইকে অনুসারীদের শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার আহ্বান জানান।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে মি. দাসকে বলতে দেখা যায়, “ রাষ্ট্র অস্থিতিশীল হয় এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নষ্ট হয় আমরা এইরকম কিছু করবো না। আবেগকে সংযত করে, আবেগকে শক্তিতে পরিণত করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবেন”।

কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর পর্যন্ত মি. দাসের বিক্ষুব্ধ অনুসারীরা ওই স্থান ত্যাগ করে নি।

চট্টগ্রামের আদালতে সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নাকচ

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা পৌনে তিনটা পর্যন্ত অনড় অবস্থানে থাকা আন্দোলনকারীদের মুহূর্মুহু স্লোগানে প্রিজন ভ্যানে থাকা মি. দাসকে নিয়ে আদালত প্রাঙ্গন ছেড়ে যেতে পারে নি পুলিশ।

অনেকে প্রিজন ভ্যানের সামনেই শুয়ে পড়েন। মি. দাসের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেয় বিক্ষোভকারীরা।

এক পর্যায়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডও ছোঁড়ে পুলিশ।

সেই সময় অনেকটা রণক্ষেত্রে পরিণত হয় আদালতসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা। ভাংচুর করা হয় আশেপাশের বিভিন্ন দোকানসহ স্থাপনায়। সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত সাতজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় আইনজীবীসহ বেশ কিছু মানুষ আহত হন। এছাড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় ছাত্র – জনতার একটি অংশ। কয়েক ঘণ্টা ধরে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে।

মি. দাসকে গ্রেপ্তার ও জামিন নামঞ্জুরের ঘটনায় মঙ্গলবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত সরকার।

নয়া দিল্লি থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “ এ ঘটনা বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের উপর চরমপন্থীদের দ্বারা ধারাবাহিক হামলারই অনুসরন”।

এদিকে, এ গ্রেফতারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিবেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

তিনি বলেছেন, “কেউ যদি রাষ্ট্রদ্রোহের মতো ঘটনায় যুক্ত থাকে, সে যেই হোক, যত বড় নেতাই হোক, তাকে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না”।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার সেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ

আদালতে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ

সোমবার বিকেলে তাকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

রাতেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে।

বেলা পৌনে এগারটায় কড়া নিরাপত্তায় তাকে মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়।

মি. দাসকে চট্টগ্রামের আদালতে তোলা হবে এ খবর পেয়ে সেখানে ভিড় করতে থাকেন তার অনুসারীরা।

ভ্যানটি আদালত চত্বরে প্রবেশের সাথে সাথেই মি. দাসের আন্দোলনরত অনুসারীরা ‘জয় শ্রীরাম’ বলে স্লোগান দিতে থাকে।

প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে মি. দাসকে দোতলায় আদালতের এজলাসে তোলার সময় অনেক পুলিশের সদস্যকে তার দুই পাশে হাত ধরে ব্যারিকেড তৈরি করতে দেখা যায়।

এ সময় মি. দাসের পাশে তার আইনজীবীদের দেখা যায়। দুই হাত তুলে উপস্থিত বিক্ষুব্ধ অনুসারীদের প্রণাম করতে দেখা যায় মি. দাসকে। তাদের শান্ত থাকার অনুরোধ করেন তিনি।

আদেশের পরের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একেবারে আদালত ভবনের সামনেই দাঁড়ানো একটি প্রিজন ভ্যান। ভেতরে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস।

পুলিশের একজন সদস্যের হাতে একটি হ্যান্ড মাইক ধরা যেটি তিনি প্রিজন ভ্যানের উপরে শিকের ফাঁকে ধরে রেখেছেন।

এ সময় ওই পুলিশ সদস্যের পাশে অসংখ্য আইনজীবী ও মি. দাসের অনুসারী ভ্যানটিকে ঘিরে ছিলেন।

প্রিজন ভ্যানের ভেতর থেকে মি. দাস ওই হ্যান্ডমাইকে তার বিক্ষুব্ধ অনুসারীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান।

মি. দাস বলেন “ রাষ্ট্র এবং সরকারের বিরুদ্ধে নয়। পাঁচই অগাস্টের অভ্যুত্থানে যে নতুন দেশ নির্মাণের আশা করে হয়েছে আমরা সনাতনীরা তার অংশীদার। সুতরাং রাষ্ট্র অস্থিতিশীল হয় এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নষ্ট হয় আমরা এইরকম কিছু করবো না। আবেগকে সংযত করে, আবেগকে শক্তিতে পরিণত করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবেন”।

“আমাদের আট দফা দাবি মৌলিক দাবি। এটা অযৌক্তিক দাবি নয়। এটা পরিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত আপনারা আন্দোলন চালাবেন। কিন্তু দয়া করে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থান এটাতে গুরুত্ব প্রদান করবেন। এটা আমি আপনাদের সবার কাছে আশা করছি”।

তবে, মি. দাসের আহ্বানের পরও আন্দোলনকারীরা আদালত চত্বর ত্যাগ না করলে পৌনে তিনটায় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পরে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

মি. দাসের আইনজীবী শুভাশীষ শর্মা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখানে ওনার মুক্তিকামী যেসব জনতা উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালিয়ে সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে প্রভুকে প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে গেছে। সাড়ে তিনটার পর তাকে নিয়ে যাওয়া হয়”।

আইনজীবীর মৃত্যুুর ঘটনায় বুধবার একদিনের জন্য আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রামের আইনজীবীরা।

চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করা হয় মি. দাসকে

সোমবার সন্ধ্যায়ই চিন্ময় দাসকে গ্রেফতারের বিষয়টি জানা গেলে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ করে তার অনুসারীরা।

ঢাকায় শাহবাগে এবং মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে মি. দাসের অনুসারীরা।

শাহবাগে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হলে তাদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। শাহবাগ মোড়ে একদল ব্যক্তি লাঠি নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে বলে ফেসবুক লাইভে অভিযোগ করা হয়েছে, যদিও হামলাকারীদের পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। এ ঘটনায় কোন মামলা বা থানায় অভিযোগ হয়নি।

সোমবার রাতেই গ্রেফতারের প্রতিবাদে রংপুরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

এছাড়া গতকাল রাতেই খুলনা, দিনাজপুর, রাঙামাটি এবং কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলায়ও বিক্ষোভ হয়।

জামিন নামঞ্জুরের আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন

মি. দাসের আইনজীবী শুভাশীষ শর্মা বিবিসি বাংলাকে জানান জামিন নামঞ্জুরের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

“ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে প্রথমে নামঞ্জুর হওয়ার পরে আমরা আপার কোর্টে অর্থাৎ মহানগর দায়রা জজ আদালতে আমরা ফৌজদারি মিস মামলা করেছি। আদালত আমাদের মিস মামলা গ্রহণ করে আগামীকাল শুনানির জন্য রেখেছেন” বলেন মি. শর্মা।

জামিন নামঞ্জুরের যুক্তি হিসেবে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট আদেশে “ সদ্য ধৃত এবং রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধের অভিযোগ আছে” বলে উল্লেখ করেছে বলে জানান আইনজীবী মি. শর্মা।

মি. চিন্ময় দাসকে কারাগারে ডিভিশন দেয়া, খাবার ও ওষুধ সরবরাহ এবং কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়ার আবেদন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মঞ্জুর করেছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মি. শর্মা।

শুনানির সময় আদালতে মি. চিন্ময় দাস কথা বলেছেন বলে জানান এই আইনজীবী।

আইনজীবী মি. শর্মা জানান, “ চিন্ময় প্রভু আদালতে বলেছেন এই গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে সনাতনীদের আট দফা আন্দোলনের মঞ্চ দমিয়ে ফেলার জন্য হয়তো.. কোন একটা তৃতীয় শক্তির ষড়যন্ত্রের কারণেই হয়তো এই কাজটা করছে। তবে সরকার এই বিষয়টা ভুল করছে। মূলত আমরা সরকারবিরোধী কোন আন্দোলনে জড়িত নই”।

জামিন আবেদন নাকচের পর অনেকে প্রিজন ভ্যানের সামনে শুয়ে পড়েন

সংঘর্ষে নিহত একজন

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র মো. রইস উদ্দিন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, আদালত প্রাঙ্গনে সংঘর্ষের ঘটনায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে একজন নিহত হয়েছেন।

এ সময় ১৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়ে পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানান মি. উদ্দিন।

এদিকে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, “ ঘটনাস্থলেই হয়তো সাইফুল মারা যায়। হাসপাতালের আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেছে”।

এছাড়া হাসপাতালে আরও সাতজন চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।

পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে আইনজীবী, পুলিশ ও বিক্ষোভকারীরা রয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ

গ্রেপ্তার ও জামিন নামঞ্জুরে ভারতের উদ্বেগ

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চিন্ময় দাসকে গ্রেফতার ও জামিন নামঞ্জুরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “ সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, অগ্নি সংযোগের পাশাপাশি দেবতাদের মূর্তি চুরি ও মন্দিরে ভাংচুরের একাধিক ঘটনা নথিবদ্ধ রয়েছে”।

“ এসব ঘটনার হোতারা যেখানে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে, সেখানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে ন্যায্য দাবি তুলে ধরা একজন ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনাটা দুর্ভাগ্যজনক” বলে জানিয়েছে ভারত।

একইসাথে মি. দাসকে গ্রেফতারের ঘটনায় সংখ্যালঘুদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে হামলার ঘটনায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশের সরকারকে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে ভারত।

একইসাথে তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের আহ্বানও জানিয়েছে ভারত সরকার।

প্রায় আড়াই ঘন্টার বেশি সময় পর মি. দাসকে কারাগারে নেয়া হয়

অন্যদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার সামনে বিক্ষোভ করেছেন বিজেপির বিধায়করা।

তাদের সবার হাতে পোস্টারে লেখা ছিল “চিন্ময় মহাপ্রভুর নিঃশর্ত মুক্তি চাই”।

ওই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, “চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি আমরা।

“ সারা পৃথিবীর সব হিন্দুদের ঐকবদ্ধ হতে হবে। আজ কলকাতায় বিজেপি বিধায়করা বিক্ষোভ দেখালেন। তবে বাংলাদেশে যদি হিন্দুদের ওপরে অত্যাচার অতি সত্বর বন্ধ না হয় তাহলে আমরা আরও জোরালো বিক্ষোভ শুরু করবো ” জানিয়েছেন মি. অধিকারী।

একইসাথে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নাজুক উল্লেখ করে ন্যায়বিচার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মি. মজুমদার।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আটকের বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে তার সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন)। তারা ইসকন নেতা চৈতন্য কৃষ্ণ দাসকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধও জানায়।

সেখানে বলা হয়েছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বাংলাদেশে ইসকনেরএকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ইসকনের সাথে সন্ত্রাসবাদের যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার কোন ভিত্তি নেই বলেও ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

যদিও চট্টগ্রামের হাজারি গলিতে একটি সংঘর্ষের ঘটনার পর আটই নভেম্বর ঢাকায় একটি সংবাদ সম্মেলন করে ইসকন বাংলাদেশ জানিয়েছিল যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ইসকনের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

এদিকে, গ্রেফতার ও জামিন নামঞ্জুরের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পণ্যবাহী ট্রাক আটকে দেয়া হয়েছে বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী জানিয়েছেন, “ পশ্চিমবঙ্গের কোন সীমান্তে পণ্যবাহী ট্রাক আটকে দেয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি বলে বিএসএফ জানিয়েছে। কোথাও জমায়েতের তেমন কোন ঘটনাও ঘটে নি। ট্রাক আটকানোর মত কোন কর্মসূচি দলীয়ভাবে এখনও পর্যন্ত নেয়া হয় নি বলে বিজেপির নেতারা জানিয়েছেন”।

বাংলাদেশের সরকার কী বলছে?

রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।

মঙ্গলবার রংপুরে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার ওপর যদি কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ ও আঘাত আসে, এবং রাষ্ট্রের প্রতি অবমাননা হয়, রাষ্ট্রদ্রোহের মতো ঘটনা ঘটে, সেক্ষেত্রে সরকার অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিবে।”

পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, “একটি গ্রেফতারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে”। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, কেউ যদি রাষ্ট্রদ্রোহের মতো ঘটনায় যুক্ত থাকে, সে যে-ই হোক, যত বড় নেতাই হোক, তাকে কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না”।

মি. দাসকে “সম্প্রদায় বিবেচনায় নয়, রাষ্ট্রের বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে” বলে জানান ক্রীড়া উপদেষ্টা।

মঙ্গলবার দুপুরে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আদালতে হাজির করার পর সেখানে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করতে থাকেন তার অনুসারীরা

যে মামলায় গ্রেফতার

চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় দায়ের করা একটি রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করা হয়।

গত ৩১শে অক্টোবর বিএনপি নেতা ফিরোজ খান (পরে বহিষ্কৃত) মামলাটি করেন। ১৯ জনকে আসামি করা হয় এ মামলায়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর নগরের নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্টে স্তম্ভের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে, যা এখনও সেখানে রয়েছে।

২৫শে অক্টোবর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে লালদীঘির মাঠে একটি মহাসমাবেশ হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ ওই সমাবেশে যোগ দেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে অবমাননা করে আগে টানানো জাতীয় পতাকার উপর সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে সেখানে স্থাপন করে দেয়।

যা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অখন্ডতাকে অস্বীকারের শামিল। আসামিরা দেশের ভেতর অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশকে অকার্যকর করার তথা রাষ্ট্রদ্রোহ কর্মে লিপ্ত হয়েছে বলে এ মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।

বিবিসি নিউজ বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024