রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন

টলস্টয়ের স্মৃতি (পর্ব- ০৫)

  • Update Time : বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪, ৩.৩৫ পিএম

ম্যাকসিম গোর্কী

আট

আজকে গ্র্যাণ্ড ডিউক নিকোলাই মাইকেলোভিচ টলস্টয়ের বাড়িতে এসেছিলেন। তাঁকে দেখে বুদ্ধিমান মনে হোলো। তাঁর আচায় ব্যবহারে নম্র দীনতা রয়েছে, তিনি স্বল্পভাষী। চোখদুটিতে সহানুভূতি ত মাখানো। । সুন্দর সুঠাম দেহ; ভাবভংগীতে একটি প্রশান্ত ভাব। লিও নিকোলাইয়েভিচ তাঁর পানে তাকিয়ে সস্নেহ গম্ভীর হ সি হাসলেন, কখনো ফরাসী ভাষায়, কখনো বা ইংরেজিতে কথা বলতে লাগলেন। রুশ ভাষায় বললেন: “কারামজিন লেখেন জারের জন্যে। সলোভিয়ভের রচনা যেমন দীর্ঘ, তেমনি নীরস।

ক্লুচেভ স্কি লেখেন তাঁর নিজের খুশীতে। ক্রুচেভস্কি ভারী ধূর্ত মানুষ, প্রথমে আপনার মনে হবে, তিনি বুঝি আপনার প্রশংসা করছেন, কিন্তু আরো যখন পড়তে থাকবেন, তখন দেখবেন তিনি নিন্দাই করছেন।” কে যেন জাবিয়েলিনের নামটা উল্লেখ করলেন। “জাবিরেলিন, চমৎকার মানুষ। সখের সংকলয়িতা; কাজে আসুক, না আসুক, যা পান তাই তিনি সংকলন ক’রে রাখেন। খাদ্য সম্বন্ধে তিনি এমন বর্ণনা দেন যে কখনো ভালো ক’রে দুটি খেতে পেয়েছেন মনে হয় না। তবু ভারী মজা লাগে তাঁর লেখা পড়তে।”

নয়

তাঁকে দেখে আমার সেই দণ্ডপাণি তীর্থযাত্রীদের কথা মনে পড়ে, যাঁরা পৃথিবীর বুকে পদব্রজে এক আশ্রম থেকে অন্য আশ্রমে, এক ঋষির অস্থি-অবশেষ থেকে অন্য ঋষির অস্থি অবশেষে, সবার কাছে গৃহহীন ও পরিচয়হীন প্রবাসী হ’য়ে সহস্র সহস্র মাইল পথ অতিক্রমণ করছেন। তাঁদের জন্য পৃথিবী নয়, ভগবানও নয়। তাঁরা অভ্যাস- বশে ভগবানের উপাসনা করেন; কিন্তু গোপনে অন্তরের অন্তর থেকে তাঁরা তাঁকে করেন ঘৃণা-আক্রোশ ভরে প্রশ্ন করেন, কেন তিনি তাঁদের পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত এমনভাবে খেদিয়ে নিয়ে চলেছেন? কেন?

মানুষের দল যেন সমস্ত পথের উপর গাছের গুড়ি, গাছের শিকড়, কিম্বা পাথরের মতো ছড়িয়ে রয়েছে। লোকে তাদের উপর অতর্কিতে এসে পড়ে, কখনো বা তাদের কাছে আঘাতও পায়। অন্যান্য মানুষকে বাদ দিয়ে মানুষের চলে। কিন্তু কোনো মানুষের সংগে তার নিজের কোনো সাদৃশ্য যে নেই, এই কথা ঘোষণা ক’রে অপরকে চমকে দিতেও মানুষের বেশ লাগে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024