শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন

ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার ডাটা সুরক্ষা নিশ্চিত করলে ভবিষ্যতে আর ইন্টারনেট বন্ধ হবে না

  • Update Time : বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪, ৫.৩৩ পিএম

সারাক্ষণ ডেস্ক

বর্তমানে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) স্বীকৃত। আমাদের দেশে বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন সকল কাজকর্ম, অফিস আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ প্রকৃতি, বিনোদন সংস্কৃতি সকল মাধ্যম ইন্টারনেট নির্ভর। করোনা মহামারিতে আমাদের দেশের অর্থনীতি রাষ্ট্রব্যবস্থা ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল হয়েছিল।

ইন্টারনেট না থাকার ফলে আমরা কি পরিমান ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারি তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময়। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল প্রায় ১৩ দিন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ ছিল আট দিন, আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ ছিল প্রায় ১৫ দিন। বিভিন্ন ব্যবসায়ী অর্থনীতিবিদদের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছিল কেবলমাত্র ইন্টারনেট বন্ধের কারণে। ব্যাংক বীমা চিকিৎসা সবকিছু বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ ইন্টারনেট এখন আর বিনোদন কিংবা কথা বলার মধ্যে বা পরিবারের যোগাযোগের মাধ্যম নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ইন্টারনেট এখন স্বীকৃত মৌলিক মানবাধিকার। তাই বাংলাদেশে ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার ও ডাটা সুরক্ষা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।


বুধবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন আয়োজিত ‘সংবিধানে ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার ও ডাটা সুরক্ষা অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক নাগরিক মতামত আলোচনা সভায় বক্তব্যতার এসব কথা বলেন।

আলোচনায় বেসিস’র সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ইন্টারনেট নির্ভর। বিশ্বের সাথে সমস্ত যোগাযোগসহ দেশের প্রায় সব কাজই এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হয়। আর্থিক লেনদেন থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজই হয় এখানে। সুতরাং ইন্টারনেট এখনো সাধারণ কিছু না। এটি মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। তাই ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবির সঙ্গে আমি একমত পোষণ করছি।

আইআইজিএবি’র সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কথা জানি, ন্যাশনাল আইডি কার্ডের বিষয়ে জানি। ইন্টারনেটে যেন আমার ডাটাটা সুরক্ষিত থাকে, এটা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সরকারকে প্রস্তাব দিতে হবে এবং যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে এবং দায়িত্ব নিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ইন্টারনেটে মৌলিক অধিকার দেওয়ার যে প্রস্তাব এসেছে, সেটার সঙ্গে আমি একমত। যে কারণে আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে। যে কারণে এই প্রজন্ম ফার্মের মুরগি তকমা ছাড়িয়ে রাজপথে নেমেছে। সেই মাধ্যমটাকে ছোট করার কোন সুযোগ নেই। রাজনৈতিক দলের পয়সা উৎপাদনের কিছু ক্ষেত্রে। এর মধ্যে রয়েছি ইন্টারনেটের ব্যবসা ও ডিসের ব্যবসা। এই অন্তর্র্বতী সরকারের কাছে আমরা দাবি করছি এই ব্যবসাগুলোকে কর্পোরেট করে ফেলার। কারণ এখান থেকে রাজনৈতিক দলের নেতারা কোটি কোটি টাকা আয় করেন।

তিনি বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের এই দাবি সামারী আমাদেরকে দিবেন। আমরা সেগুলো প্রয়োজনীয় জায়গায় পৌঁছাবো।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদের (খ) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার থাকিবে। এখানে লক্ষণীয় যে, বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের সাথে সাথে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতারক হ্যাকার ও স্ক্যামার চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে নাগরিকের তথ্য বেহাত করে যেমন ভাবে সর্বশ্যান্ত করছে আবার অন্যদিকে বেসরকারি বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নাগরিকের তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে ব্যর্থ হয়েছে। যেহেতু বর্তমানে চিঠি আদান-প্রদান এর মাধ্যম আর নেই, তাই ইমেইল হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা প্রযুক্তির অন্যান্য সকল মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমনকি সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে নাগরিকের প্রদেয় তথ্য সুরক্ষিত রাখতে সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল বিন্যাসে নাগরিকের ডাটা সুরক্ষা অন্তর্ভুক্তি উল্লেখ থাকা অতি আবশ্যক বলে আমরা মনে করছি।

আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রযুক্তি বিশ্লেষক তানভীর হাসান জোহা, টেলিযোগাযোগ বিশ্লেষক মোস্তফা মাহমুদ হুসাইন, আইএসপিএবি’র জয়েন্ট সেক্রেটারী কাইয়ুম, রাষ্ট সংস্কার আন্দোলনের দিদারুল ভূইয়া প্রমুখ।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024