রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৮ পূর্বাহ্ন

টলস্টয়ের স্মৃতি (পর্ব- ০৬)

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪, ৪.০০ পিএম

ম্যাকসিম গোর্কী

দশ

“প্রাশিয়ার ফ্রিড্রিখ একটি অত্যন্ত সত্য কথা বলেছেন: ‘প্রত্যেককে আত্মরক্ষা করতে হবে তার নিজের উপায়ে।’ তিনি আরো বলেছেন: ‘যতো পারো তর্ক করো, কিন্তু আদেশ মেনে চলো।’ কিন্তু মৃত্যুশয্যায় তিনি নিজেই স্বীকার করেন: ‘আমি ক্রীতদাসদের শাসন ক’রে ক্লান্ত হ’য়ে পড়েছি।’ তথাকথিত মহাপুরুষদের মধ্যে সর্বদাই ভয়ানক রকমের স্বতঃবিরুদ্ধতা দেখা যায়: আর তাঁদের এই স্বতঃবিরুদ্ধতাকে তাঁদের অন্যান্য মূঢ়তার সংগেই মানুষ মাফ করে। স্বতঃবিরুদ্ধতাট। নির্বুদ্ধিতা নয়, কারণ, নির্বোধেরা একগুঁয়ে, কেমন ক’রে যে আত্মবিরোধিতা করতে হয়, তা তারা জানে না।

ফ্রিডরিখ ছিলেন এক অদ্ভুত মানুষ: জার্মানদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা ব’লে তিনি খ্যাতিলাভ ক’রেছিলেন, অথচ জার্মানদের তিনি সইতে পারতেন না। এমন কি গ্যেটে আর ভাইল্যান্ডকেও তিনি করতেন না পছন্দ।”

এগার

বাল্যন্টের কবিতা সম্পর্কে গতকাল তিনি ব’লেছিলেন: ‘সত্যকে মুখোমুখি চোখাচোখি দেখার আতংক থেকেই রোমান্টিসিজমের জন্ম।” এবিষয়ে সুলারের সংগে তাঁর মতবিরোধ ঘটলো এবং সুলার উত্তেজনায় গদগদ হ’য়ে আরো কয়েকটা কবিতা পাঠ করলো।

“দেখো, লিওভুশকা, ওগুলো কবিতা নয়। ওগুলো হোলো হাতুড়ের কাজ, রাবিশ। কতোকগুলো অর্থহীন শব্দকে একঠাই জড়ো করা। কবিতার মধ্যে কোনো কৃত্রিমতা থাকবে না; যখন ফেট লিখেছিলেন:

“জানি নাই, কি গাহিব গান,

শুধু জানি, মোর গান লভিছে পরান।”

তখনই তিনি জনসাধারণের সত্যকারের কবিতার অকপট অর্থ প্রকাশ করতে পেরেছিলেন। কৃষক, সে জানে না যে সে কবি, কিন্তু সে যখন বলে-ওঃ, আঃ, হেই, হেঁইয়ো-তখনই এক সত্যকারের সংগীতের জন্ম হয়, সে গান পাখীর গানের মতো আত্মার গভীর থেকে স্বতঃই উৎসারিত হ’য়ে আসে। কিন্তু তোমাদের এই আধুনিক কবিরা এঁরা উদ্ভাবন ক’রে বেড়াচ্ছেন। ফরাসীদেশে কতোকগুলো বাজে জিনিষ তৈরী হয়, যেগুলোকে বলে আতল্ দ্য পারী। তোমাদের ঐ শব্দের মালাকাররা মাত্র তৈরী করছেন তাই। নেক্রাসভের কবিতা- গুলোও আগাগোড়া সবটাই কেবল ওই মনগড়ামি।”

“আর বেরাঞ্জার?” সুলার প্রশ্ন করলো। “বেরাঞ্জার-তাঁর কথা সম্পূর্ণ আলাদা। আমাদের ও ফরাসীদের মধ্যে মিল কোথায়? তারা চায় দৈহিক অনুভূতি; তাদের কাছে রক্তমাংসের জীবনের চেয়ে আধ্যাত্মিক জীবনটা অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়। ফরাসীদের কাছে মেয়েরাই হোলো সব কিছু। তারা হোলো ক্ষয়প্রাপ্ত ক্লান্ত হতবীর্য একটা জাতি। ডাক্তাররা বলেন, ক্ষয়রোগী মাত্রই দেহবিলাসী।”

সুলার তার সুঅভ্যস্ত ঋজু ভংগীতে, শব্দের বান ডাকিয়ে তর্ক ক’রে চললো। লিও নিকোইয়েভিচ্ তার পানে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে উদার হাস্যের সংগে বললেন:

“মেয়েদের যখন বিয়ের বয়স হয় অথচ ভালোবাসার পাত্র জোটে না, তখন তারা যেমন খুঁতখুতে হ’য়ে ওঠে, তুমিও আজ ঠিক্ তেমনিটি হ’য়ে উঠেছ।”

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024