আবু ইসহাক
বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা’, জ্যামিতির অনুসিদ্ধান্তের মতো এ প্রবচনটির একটি অনুবচন বানিয়ে অনেকে, বিশেষ করে আসামি-পক্ষের উকিলেরা বলে থাকেন,- ‘পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা’। অনুবচনটি এখন প্রায় প্রবচনে পরিণত হয়েছে। এদেশের (এবং আরো অনেক দেশের) পুলিশ সম্বন্ধে অধিকাংশ মানুষের মনোভাবের স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে এই অনুবচনটিতে। পুলিশ সম্বন্ধে ইলিয়াসের মনোভাবও এরকমই ছিল এবং ছত্রিশ বছর পুলিস বিভাগে চাকরি করে অবসর গ্রহণের পরেও যে তাঁর সেই মনোভাব একেবারে বদলে গেছে, এমন কথা বুক ফুলিয়ে বলবার মতো দুঃসাহস তাঁর নেই। কারণটা যে কী তা স্পষ্ট করে বলবার কোনো প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন না।
পুলিস সম্বন্ধে যার মনোভাব এরকম, তাঁর পক্ষে পুলিস সাব-ইন্সপেক্টরের চাকরি নেওয়াটা কারো কাছে তেমন স্বাভাবিক বলে মনে হয়নি।
সম্পূর্ণ অস্থায়ী চাকরির চার বছরে ছাঁটাই, পুনর্নিয়োগ ও পুনরায় ছাঁটাই-এর টানা- হেঁচড়ায় চোখে সর্ষে ফুল দেখছিলেন ইলিয়াস। স্থায়ী চাকরির সন্ধানে অনেক ঘোরাঘুরি করেও যখন কিছু হচ্ছিল না, তখন অনিচ্ছাসত্ত্বেও পুলিস সাব-ইন্সপেক্টরের চাকরির জন্য তিনি ইন্টারভিউ দিলেন। কিছু দিন পরে সারদা পুলিস একাডেমিতে যোগদান করার নির্দেশ এল। কিন্তু পুলিশের চাকরি করবেন না বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ইলিয়াস রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওনা হলেন।
ইলিয়াস যে স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেছিলেন সে স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁকে খুব স্নেহ করতেন। তাঁর শুভানুধ্যায়ী সেই প্রধান শিক্ষক তাঁর সিন্ধান্তের খবর পেয়ে স্টিমার স্টেশনে ছুটে এলেন। তিনি বললেন,-তুমি ভুল করছ। এ সুযোগ হারালে আর চাকরিই পাবে না তুমি। এখন প্রায় সব ডিপার্টমেন্টের বড়কর্তা উর্দুওয়ালা আর চাকরিতে এখন প্রায়োরিটি দেওয়া হচ্ছে ‘রিফিউজিদের’। এদিকে সরকারি চাকরির বয়স তো তোমার পার হতে চলেছে।
-পুলিশের চাকির করব না স্যর। সবাই ঘৃণা করে পুলিশকে।
-শোনো ইলিয়াস, পুলিশকে লোকে ঘৃণা করে তাদের দুর্ব্যবহারের জন্যে, দুর্নীতির জন্যে। পুলিশ হচ্ছে দেশের শান্তিরক্ষক। তাদের কাজ হচ্ছে, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন। কোনো কোনো পুলিশ অফিসার এর উল্টোটা করেন বলেই লোকে পুলিশকে ঘৃণা করে। অথচ পুলিশ ইচ্ছে করলে মানুষের অনেক উপকার করতে পারে। মানুষের উপকার করার, মানুষের সেবা করার সবচেয়ে বেশি সুযোগ রয়েছে পুলিশের চাকরিতে।
তাই ভালো ছেলেদেই বেশি সংখ্যায় পুলিশের চাকরিতে চোকা উচিত। তাই আমি বলছি, তুমি কোনো রকম দ্বিধা না করে চাকরিতে জয়েন করো।
প্রধান শিক্ষকের উপদেশ মাথায় নিয়ে ইলিয়াস সারদা পুলিশ একাডেমিতে যোগদান করলেন। সেখানে পুরো একটি বছরের প্রশিক্ষণ শেষ করে এবং পরবর্তী দুবছর থানা, কোর্ট ইত্যাদি পুলিশের বিভিন্ন অফিসে শিক্ষানবিশি করে বদলি হলেন পদ্মাপাড়ের এক থানায় সেকেণ্ড অফিসার হিসেবে।
মানুষের উপকার করার, মানুষের সেবা করার সবচেয়ে বেশি সুযোগ রয়েছে পুলিসের চাকরিতে প্রধান শিক্ষকের এ উক্তির প্রমাণ পেলেন ইলিয়াস কিছুদিনের মধ্যেই। খুন, ডাকাতি, চুরি, বাটপাড়ি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ইত্যাদি বহু রকমের মামলা আসে থানায়। এসব মামলার তদন্তকালে দিনকে রাত আর রাতকে দিন করবার প্রস্তাব নিয়ে অনেক ঘটক আসত ইলিয়াসের কাছে লোভনীয় যৌতুকের প্রতিশ্রুতি নিয়ে। কিন্তু ইলিয়াস তাঁর কর্তব্যকর্মে ছিলেন অটল। সুনীতিকে তালাক দিয়ে দুর্নীতির সাথে গাঁটছড়া বাঁধতে তিনি রাজি হন নি কোনো দিন। কখনো বিনীতভাবে, কখনো সেপাই ডেকে গলাধাক্কা দিয়ে এসব ঘটকদের তিনি তাড়াতেন। এরকম কিছু গলাধাক্কার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর তিলকে তাল আর তালকে তিল করাবার তালে আর কোনো ঘটক- দালাল তাঁর কাছে আসতে সাহস পায় নি কোনো দিন। জীবনসায়াহ্নে চাকরিজীবনের স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে অনেক ঘটনার কথাই ইলিয়াসের মনে পড়ে। অবসরগ্রহণের বছর সাতেক আগের কথা। মাত্র কয়েক দিন আগে ইলিয়াস এক বিভাগীয় নিরাপত্তা অফিসের প্রধান কর্মকর্তা হিসাবে কার্যভারগ্রহণ করেছেন। একদিন ইউনিফর্ম পরিহিত এক পুলিশ অফিসার তাঁর অফিস-কক্ষে প্রবেশ করে স্যাল্যুট দিয়ে দাঁড়ালেন। ইলিয়াস ফাইল থেকে মাথা তুলে তাকাতেই পুলিশ অফিসার বললেন, স্যার, আমি সাতঘরিয়া থানার ওসি। আমি এসেছি আপনাকে আমার শ্রদ্ধা জানাতে। আমার বাবার কাছে আপনার কথা শুনেছি। আপনি আমার বাবা ও চাচাকে মিথ্যা চুরির মামলা থেকে বাঁচিয়েছিলেন।
-কোন মামলা?
-পাটের জাগ চুরির মামালা, স্যার। আপনি তখন-।
-ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে। তোমার বাবার নাম যেন কী?
-আবদুল গনি সরদার।
-হ্যাঁ আমার চাকরি-জীবনের শুরুর ঘটনা। ইলিয়াস বললেন, প্রায় তিরিশ বছর পার হয়ে গেছে এর মধ্যে।
-হ্যাঁ স্যার, আমি তখন কোলের শিশু। বড় হয়ে আপনার কথা শুনেছি বাবার কাছে। তারপর বিএ পাস করে সাব-ইন্সপেক্টরের চাকরি পেলাম। বাবা আপনার নাম করে বললেন, ‘আমার একান্ত ইচ্ছা, তুমি তাঁর মতো অফিসার হবে। যদি তা না পারো তবে তোমার বাপ বলে আমার নাম কোনো দিন উচ্চারণ করবে না।’
আরো দু’-এক কথার পর ওসি স্যাল্যুট দিয়ে চলে গেলেন।
খুন-খারাবি, ধষর্ণ-ডাকাতির মতো বড় বড় মামলার তদন্ত করে চার্জশীট দিয়েছেন ইলিয়াস। আদালতে বিচারের পর জেল-জরিমানা হয়েছে বহু অপরাধীর। সেসব মামালার অনেকগুলোর কথাই কালের প্রবাহে তাঁর স্মৃতি থেকে প্রায় মুছে গেছে। কিন্তু একটা অতি সাধারণ পাটের জাগ চুরির মামলা তাঁর স্মৃতিতে এখনো দীপ্যমান। মামলায় চার্জশীট দেওয়ার পর আদালতের বিচারে অপরাধীর শান্তি হলে তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা পুরস্কার পেয়ে থাকেন। মামলায় ফাইন্যাল রিপোর্ট দিয়ে কোনো পুলিশ অফিসার কোনো কালে পুরস্কার পেয়েছে এমন দৃষ্টান্ত একটাও আছে কি না সন্দেহ। ইলিয়াসই সম্ভবত একমাত্র অফিসার যিনি অতি সাধারণ ঐ পাটের জাগ চুরির মামলায় ফাইন্যাল রিপোর্ট দিয়ে পুরস্কার পেয়েছিলেন।
থানার সেকেন্ড অফিসার হিসেবে যোগদানের সাত-আট মাস পরের কথা। একদিন সন্ধ্যার পরে এজাহার দিতে এসেছিল দশ মাইল দূরের এক লোক। তার সাথে এসেছিলেন ইউনিয়ন বোর্ডের জনৈক মেম্বার। ইলিয়াস এজাহার নিলেন। এজাহারের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এরূপ বাদি তার বাড়ির কাছের বিলে পাট জাগ দিয়ে রেখেছিল। তার পাঁচটা জাগের তিনটা চুরি হয়ে গেছে। গোপনে খোঁজ করতে করতে জাগ তিনটের এবং চোরের হদিস পাওয়া গেছে। আবদুল গনি সরদার ও তার ভাই আবদুল হাই সরদার ঐ পাটের জাগ তিনটে চুরি করে বর্ষার জলা মাঠ দিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে রেখেছে তাদের বাড়ির উত্তর পাশে।
ইউনিয়ন বোর্ডের মেম্বার জানালেন যে জাগ দেওয়া পাট পুরোপুরি পচে গিয়ে কোষ্টা ছাড়াবার মতো অবস্থা হয়েছে। সুতরাং সেদিনই তদন্ত করতে যাওয়া দরকার, কারণ চোরেরা যদি পাটের কোষ্টা ছাড়িয়ে ফেলে তবে চুরি প্রমাণ করবার আর কোনো উপায় থাকবে না।
অতএব ইলিয়াস রাতের আহার সেরে দুজন কনস্টেবল সাথে নিয়ে রাত দশটার দিকে থানার তে-মাল্লাই নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। বাদির ডিঙি চলল থানার নৌকার আগে আগে পথ দেখিয়ে। কচুরি ঠেলে ঘটনাস্থলে পৌছুতে রাত প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। যেহেতু এজাহারে আসামিদের নাম আছে সেহেতু তদন্তের আগেই তাদের পাকড়াও না করলে তারা নির্ঘা পালিয়ে যাবে। তাই রাত পোহাবার আগেই ইলিয়াস সেপাই নিয়ে আসামি দু’জনকে গ্রেপ্তার করে তাঁর নৌকায় তুলে নিলেন। আসামিদের বাড়ির লোকজনের, বিশেষ করে বউ-ঝিদের কান্নাকাটির শব্দে পাড়ার লোকজন ঘুম-ঘুম চোখে এসে জড়ো হলো থানার নৌকার কাছে। বাদির নৌকা অনুসরণ করে ইলিয়াসের নৌকা এবার চলল পাটের জাগের সন্ধানে। বাড়ির উত্তর পাশে তিনটে জাগই ঢাকা রয়েছে কচুরিপানা দিয়ে।
বর্ষাকাল। চারদিকে পানি আর পানি। এ এলাকার সব বাড়ি এখন জলবেষ্টিত দ্বীপ। আশপাশের লোক নৌকা করে এসে থানার নৌকার চারপাশে জড়ো হয়।
ইলিয়াস নৌকায় বসেই তদন্ত শুরু করে দিলেন। তিনটে জাগ চুরি হয়ে যাওয়ার পর বাদির যে দুটো জাগ অবশিষ্ট ছিল তা থেকে দুই আঁটি পাট তুলে আনার জন্য তিনি একজন কনস্টেবলকে পাঠালেন বাদির সঙ্গে। নৌকা করে যারা এসেছিল তাদের থেকে দুজন বয়স্ক লোককে সাক্ষী হিসেবে অন্য কনস্টেবলটির সাথে পাঠালেন কছরি পারায় ঢাকা তিনটে জাগ থেকে তিন আঁটি পাট উঠিয়ে আনতে। তারা তিন আঁটি পাট উঠিয়ে রাখে একটা উদলা নৌকোর ওপর। কিছুক্ষণ পরে বাদি তার নৌকোয় তুলে নিয়ে আসে দুই আঁটি পাট। মেম্বার থানার নৌকোয় বসেছিলেন। তিনি পাটের আঁটির দিকে ইলিয়াসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, দেখুন স্যর, এই পাট আর ওই পাট একনেলে এবং একই জাতের। মিলিয়ে দেখুন, ওগুলো লম্বায় একসমান আর মোটাও একরকম।
ইলিয়াস বাদির পাট আর কথিত চোরাই পাট থেকে কয়েকটা করে তুলে মিলিয়ে দেখলেন, মেম্বারের কথাই ঠিক। ওদিকে আসামি আবদুল গনি বারবার প্রতিবাদ করে বলছে, তার বাড়ির পাশে জাগ দেওয়া পাট তার নিজের জমির, সে নিজেই বুনেছে, নিড়িয়েছে এবং নিজেই কেটে জাগ দিয়েছে। উপস্থিত গ্রামবাসীদের কেউ-কেউ বাদির পক্ষ হয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছে। আসামির পক্ষ নিয়ে একজন মুখ খুলতেই মেম্বার ধমক দিয়ে বলেন, ‘চুপ কর ব্যাটা, চোরের সাক্ষী মাতাল।’ এরপর আসামির পক্ষে বলবার জন্য কেউ আর এগিয়ে আসেনি। চুরি যে প্রমাণিত হয়ে গেছে সে সম্বন্ধে কারোই কোনো সন্দেহ নেই বলে মনে হলো তদন্তকারী অফিসারের। তবুও তিনি দুই নৌকোয় রাখা পাটের আঁটি থেকে আলাদাভাবে কয়েকটা পাটের কোষ্টা ছাড়িয়ে পানিতে ধুয়ে দেখলেন। কোষ্টাও হুবহু এক। পাটশলা মিলিয়েও দেখা হলো। সেগুলোও একদম একরকম। অতএব এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশীট না দিয়ে উপায় নেই, ভাবেন ইলিয়াস।
আসামিদের বাড়ি থেকে কান্নার রোল ভেসে আসছে।
ইলিয়াস আবার পাটের কোষ্টা ও শলা ভালো করে পরীক্ষা করতে লাগলেন। পাটশলার গোড়ার দিকে চোখ পড়তেই তাঁর দৃষ্টি আটকে যায়। তিনি পাটশলাগুলোর গোড়ার দিক চোখের সামনে উঁচু করে ধরে চেয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। তারপর বাদিকে জিজ্ঞেস করেন, আপনার কোন জমির পাট এগুলো?
-আমার বাড়ির পুবদিকের জমির।
-জমিটা তো বিলের মধ্যে, তা-ই না?
-হ্যাঁ স্যার।
এবার আসামি আবদুল গনির দিকে ফিরে তিনি জিজ্ঞেস করেন, আপনি তো বলছেন এ পাট আপনার জমির। আপনার কোন্ জামির পাট এগুলো?
-স্যার, আমার পাট চরের জমির।
ইলিয়াসের কাছে বাদির পাট ও আসামির নিজের বলে দাবিকৃত পাটের পার্থক্য স্পষ্টরূপে ধরা পড়েছে এবং পার্থক্যের কারণটাও। তিনি একজন কনস্টেবলের কাছ থেকে চাবি নিয়ে আসামিদের হাতকড়া খুলতে খুলতে বলেন, আপনারা অযথা কষ্ট পেয়েছেন বলে আমি খুবই দুঃখিত।
আসামি দু’জন কিছু বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ইলিয়াসের দিকে। বাদি ও মেম্বারের চোখে স্তম্ভিত দৃষ্টি। চারপাশের নৌকায় যারা ছিল তারা বিস্ময়ে হতবাক।
ইলিয়াস কয়েকটা পাটশলার গোড়ার দিক সকলের চোখের সামনে লম্বিয়ে ধরে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বললেন, আপনারা দেখুন, এ শলাগুলোর গোড়ার দিকটা একেবারে নিরেট অর্থাৎ ফাঁপা নয়, এতে কোনো ছিদ্র নেই। পাটগাছের গোড়ার দিকের ইঞ্চিখানেক এরকম নিরেটই থাকে। তারপর একটা শলার গোড়ার দিকের ইঞ্চিখানেক ভেঙে বলেন, এই দেখুন নিরেট অংশ ভেঙে ফেলার পর শলার মাঝের ছিদ্র বেরিয়ে পড়েছে। বিলের পাট বলে বাদির পাট একেবারে গোড়া থেকে কাটা সম্ভব হয়েছে।
একটু থেমে আসামির দাবিকৃত পাটের শলা দেখিয়ে তিনি বললেন, এই দেখুন আপনারা, এগুলো চর অঞ্চলের পাট। চরের পাটগাছের গোড়া পলিমাটিতে ঢেকে যাওয়ায় এ পাট একেবারে গোড়া থেকে কেটে আনা সম্ভব হয়নি। তাই গোড়ার নিরেট অংশ রয়ে গেছে পলির নিচে। আপনারা দেখুন, এ পাটশলাগুলোর ছিদ্র দেখা যাচ্ছে।
হতবাক দর্শকদের সমর্থনজ্ঞাপন স্বতঃস্ফূর্ত গুঞ্জন শোনা যায়। বাদি ও মেম্বারের মুখ চুন হয়ে গেছে।
ইলিয়াস আবার বলেন, অতএব আপনারা স্পষ্টই বুঝতে পারছেন, এই পাট আসামিদেরই। তারা এ চুরির সাথে জড়িত নয়।
ইলিয়াস তাঁর পাশে বসা উক্ত আসামিদের দিকে তাকান। তাদের মুখে কৃতজ্ঞতার অনির্বচনীয় হাসি, যে হাসি তাঁর স্মৃতির মণিকোঠায় আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে।
ঘটনাস্থল থেকে রওনা হয়ে মাইল তিনেক দূরের কাটাখালিতে ঢুকতেই মাঝিরা দেখতে পায়, বিলের মাঝ দিয়ে দ্রুত ধাবমান একটা ডিঙিতে দাঁড়িয়ে দুজন লোক হাত নেড়ে তাদের নৌকো থামাতে বলছে। ইলিয়াস ছই-এর মুখে বসেছিলেন। তিনিও দেখতে পেয়েছেন লোক দু’জনকে। তাঁর নির্দেশে মাঝিরা খালের পাড়ে নৌকো ভিড়ায়। ডিঙি নিয়ে লোকদুটো থানার নৌকার কাছে এসে ইলিয়াসকে সালাম দিয়ে হাতজোড় করে বলে, স্যর, মেম্বর মানুষটা বড় পাজি, বড় জালিম। ওর ডরে ঐখানে আমরা মোখ খুলতে পারি নাই। তাই বিলের মইদ্যে দিয়া কোণাকুণি লগ্নি মাইর্যা আসছি আপনের লগে কথা কওনের লেইগ্যা।
-কী কথা আপনাদের বলুন।
-স্যর, গনি সরদারের চরের জমি দখল করনের লেইগ্যা ঐ মেম্বর মিথ্যা মামলা সাজাইছিল।
-তা আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। মিথ্যা মামলার জন্য শিগগিরই আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন।
Leave a Reply