শ্রী নিখিলনাথ রায়
নন্দকুমারের নিকট কমল উদ্দীনের উপস্থিত হইবার কারণ এই ছিল যে, গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ ও আর্চভেকিন নামে কোন কর্মচারীর বিরুদ্ধে উৎকোচ লওয়ার অভিযোগ করিবার জন্য, সে ফাউক নামে কোন বিশিষ্ট ইংরেজের দ্বারা কাউন্সিলে আর্জি প্রেরণ করিতে উৎসুক হয় এবং তজ্জন্ত ফাউককে অনুরোধ করিবার জন্য নন্দকুমারের প্রয়োজন হইয়া উঠে। নন্দকুমার রাধাচরণের সহিত কমল উদ্দীনকে ফাউকের নিকট পাঠাইয়া দেন। ফাউক কাউন্সিলে আর্জি দাখিল করিতে সম্মত হন। ইতিমধ্যে হেষ্টিংস গ্রেহামের মুন্সী সদর উদ্দীনের দ্বারা কমল উদ্দীনকে বশীভূত করিয়া নন্দকুমার, ফাউক ও রাধাচরণের নামে এক অভিযোগের সূচনা করেন।
হেষ্টিংস সুপ্রীমকোর্টে জজদিগের নিকট ১৭৭৫ খৃঃ অব্দের ১৯শে এপ্রিল এইরূপ লিখিয়া পাঠান যে, কমল উদ্দীন আসিয়া আমার, নিকট এইরূপ প্রকাশ করে যে, নন্দকুমার ও ফাউক তাহার নিকট হইতে বলপূর্ব্বক আমার ও বারওয়েল প্রভৃতির নামে উৎকোচগ্রহণের এক মিথ্যা আর্জি লইয়াছে, ও গঙ্গাগোবিন্দ প্রভৃতির নামের আর্জি ফেরত চাহিলে প্রত্যর্পণ করিতেছে না। সুপ্রীমকোর্টের জজ মহোদয়েরা হেষ্টিংসের পত্র পাইয়া ২৯শে এপ্রিল হইতে ইহাকে গবর্ণর ও বারওয়েল প্রভৃতির নামে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ধরিয়া প্রাথমিক অনুসন্ধানে (Prilimi- nary inquiry) প্রবৃত্ত হইলেন।
প্রথমে কমলউদ্দীনের অভিযোগের দরখাস্ত গ্রহণ করা হইল। কমলউদ্দীন দরখাস্তে প্রকাশ করে যে, সে গঙ্গাগোবিন্দকে ভয় প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নন্দকুমার প্রভৃতির নিকট আর্জি প্রদান করিয়াছিল; বাস্তবিক তাহার তাহা পেশ করিবার কিছুমাত্র ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু নন্দকুমারের নিকট আর্জি ফেরত চাহিলে তিনি বলেন যে, যদি কমল গবর্ণরের বিরুদ্ধে কোন আর্জি লিখিয়া দেয়, তাহা হইলে তাহার পূর্ব্ব আর্জি ফেরত দিবেন।
কমল বাধ্য হইয়া তাহার মুন্সীর দ্বারা আঙ্গি লিখিয়া দেয়। পরে রাধাচরণের সহিত ফাউকের নিকট উপস্থিত হইলে, তিনি বলেন যে, গবর্ণর প্রভৃতিকে তুমি কত টাকা দিয়াছ?: কমল কিছু প্রদান করে নাই বলায়, ফাউক ক্রুদ্ধ হইয়া তাহাকে এক কেতাবের দ্বারা প্রহার করেন। অবশেষে বলপূর্ব্বক তাহাকে গবর্ণরের বিরুদ্ধে আর্জিতে মোহর করাইয়া লন এবং আর একটি বিভিন্ন ফর্দ লিখাইয়া লন। সেই ফর্দে এইরূপ লিখিত হয় যে, কমলের নিকট হইতে বারওয়েল ৩ বৎসরের মধ্যে ৪৫ হাজার টাকা, গবর্ণর ১৫ হাজার নজর, ভান্সিটার্ট ১২ হাজার, রাজবল্লভ ৭ হাজার, ও কৃষ্ণকান্ত ৫ হাজার টাকা লইয়াছেন।
Leave a Reply