শ্রী নিখিলনাথ রায়
কমল পরে সেই সকল আর্জি ফেরত পাইবার জন্য অনেক চেষ্টা করিয়াছিল, কিন্তু ফেরত পায় নাই। নন্দকুমারের জবানবন্দিতে প্রকাশ হয় যে, কমল উদ্দীন গঙ্গাগোবিন্দ প্রভৃতির আর্জি ফেরত চাহে নাই; বরং তাহা কাউন্সিলে দিবার জন্য পুনঃ পুনঃ অনু- রোধ করিয়াছিল এবং নিজেই গবর্ণরের বিরুদ্ধে আর্জি লিখিয়া লইয়া এক মুন্সীর সহিত নন্দকুমারের নিকট উপস্থিত হয়। তাহার বর্ণনা ভাল না হওয়ায়, নন্দকুমার তাহার স্থানে স্থানে পরিবর্তন করিয়া কমল উদ্দীনের মুন্সীর দ্বারা তাহা লিখাইয়াছিলেন।
এই বিষয়ের অনুসন্ধানে বিশেষ কোন ফল হইতেছে না দেখিয়া,. হেষ্টিংস বুঝিলেন যে, ষড়যন্ত্রের মোকদ্দমায় কিছুই হইবে না; তখন তিনি অন্য একটি উপায় উদ্ভাবন করিলেন। পূর্ব্বে বলা হইয়াছে যে, মোহনপ্রসাদ নামে নন্দকুমারের একজন শত্রু, সেই সময়ে হেষ্টিংসের নিকট গতায়াত করিত। এই মোহনপ্রসাদ বুলাকীদাস শেঠ নামক একজন মহাজনের আমমোক্তার ছিল। বুলাকীদাস একজন আগর- ওয়ালা বেনিয়া; তিনি প্রায়ই মুর্শিদাবাদে বাস করিতেন। মীর কাশেমের সময় হইতে তাঁহার শ্রীবৃদ্ধি হয়।
বুলাকীদাসের নিকট মহারাজ নন্দকুমার একছড়া মুক্তার কণ্ঠী, একখানি কঙ্কা, একটি শিরপেঁচ, ও ৪টি হীরকাঙ্গুরীয় বিক্রয়ার্থ প্রদান করেন; তাহাদের মূল্য ৪৮,০২১ টাকা স্থির হয়। মীর কাশেমের সহিত ইংরেজদিগের বিবাদ আরম্ভ হইলে, দেশের চারিদিকে ভয়ানক লুণ্ঠনব্যাপার আরম্ভ হয়। তাহাতে বুলাকীদাসের বাটাও লুণ্ঠিত হয়। সেই জন্য নন্দকুমারের সমস্ত জহরত অপহৃত হইয়া যায়। বুলাকীদাস নন্দকুমারকে সেই সমস্ত: জহরতের মূল্যস্বরূপ একখানি অঙ্গীকার-পত্র লিখিয়া দেন।
তাহাতে লিখিত হয় যে, বুলাকীদাস নন্দকুমারকে জহরতের মূল্যস্বরূপ ১৮,০২১ টাকা ও প্রত্যেক টাকায় চারি আনা সুদ দিতে স্বীকৃত হইলেন, এবং কোম্পানীর নিকট তাঁহার যে দুই লক্ষেরও উপর টাকা পাওনা আছে, তাহা পাইলেই, সমস্ত পরিশোধ করিয়া দিবেন। এই অঙ্গীকারপত্রে বুলাকীদাস মোহর করিয়া দিলে, মাতাব রায় ও মহম্মদ কমল আপন আপন মোহর এবং বুলাকীদাসের উকীল শীলাবৎ নিজের স্বাক্ষর সাক্ষিরূপে সংযুক্ত করিয়া দেয়। বুলাকীদাসের মৃত্যু হইলে, কোম্পানীর নিকট পাওনা টাকা হইতে নন্দকুমার সেই অঙ্গীকারের বলে, বুলাকীদাসের সম্পত্তির একজিকিউটার পদ্মমোহন দাসের সম্মতিতে সেই টাকা পরিশোধ করিয়া লন।
Leave a Reply