শ্রী নিখিলনাথ রায়
পণ্ডিতদিগকে মহারাজের কারাগৃহ দেখাইলে, তাঁহারা বলেন যে, মহারাজ নন্দকুমার এরূপ স্থলে আহার করিতে পারেন না; যদি করেন, তাহাতে তাঁহার জাতি যাইবে না, কিন্তু প্রায়শ্চিত্ত করিতে হইবে। পণ্ডিতদিগের এইরূপ অদ্ভুত ব্যবস্থায় নন্দকুমারকে কারাযন্ত্রণাই ভোগ করিতে হইল। তিনি জামিনে নিষ্কৃতি পাইলেন না। হায়! বঙ্গদেশে চিরকালই কি ‘পলিটিকাল পণ্ডিত’ পাওয়া যাইত? নন্দকুমারের কারাবাসে ও মিথ্যা মোকদ্দমায় ক্লেভারিং, মন্সন ও ফ্রান্সিস অত্যন্ত বিচলিত হইলেন। নন্দকুমার, ফাউক প্রভৃতির নামে মোকদ্দমা উপস্থিত হইলে, তাঁহারা নন্দকুমারের বাটীতে গমন করিয়া তাঁহাকে একবার উৎসাহিত করিয়া আসেন।
এদিকে জজদিগের সহিত যোগ দিয়া হেষ্টিংস নন্দকুমারের সর্ব্বনাশে প্রবৃত্ত হইলেন। পূর্ব্বে বলা হইয়াছে যে, ষড়যন্ত্রের মোকদ্দমার প্রাথমিক অনুসন্ধান হইতেছিল। জালকরা অভিযোগ উপস্থিত হইলে, তাহার পরবর্তী দাওরায় ষড়যন্ত্রের মোকদ্দমার পূর্ব্বেই জালকরা মোকদ্দমার দিন পড়িল। ধন্য ন্যায়পর ব্রিটিশ বিচারকগণ! তোমরা হেষ্টিংসের জন্য বিচারালয়ের নিয়ম পর্যন্তও লঙ্ঘন করিতে ত্রুটি কর নাই!
১৭৭৫ খৃঃ অব্দের ৮ই জুন হইতে কলিকাতার সুপ্রীমকোর্টে মহারাজ নন্দকুমারের জালকরা অভিযোগের বিচার আরম্ভ হয়। ৯ই জুন এডওয়ার্ড স্কট, রবার্ট ম্যাকফালিন, টমাস স্মিথ, এডওয়ার্ড এলারিংটন, যোসেফ বার্ণার্ত স্মিথ, জন রবিন্সন, জন ফার্গুসন, আর্থার আডি, জন কলিস, সামুয়েল টাউচেট, এডওয়ার্ড সাটারথোয়েট এবং চার্লস ওয়েইন এই দ্বাদশ জন জুরী স্থির হন।
তাঁহাদের মধ্যে জন রবিন্সনকে জুরীপতি নির্ব্বাচিত করা হয়। সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতি ইম্পে সাহের চেম্বার্স, হাইড ও লেমষ্টেয়ার জজত্রয়ের সহিত জুরীদিগকে লইয়া বিচারে প্রবৃত্ত হইলেন। পূর্ব্বোল্লিখিত ইলিয়ট সাহেব দ্বিভাষীর কার্য্যে নিযুক্ত হন। নন্দকুমারের পক্ষে জারেট আটর্ণী ও ফ্যারার কৌন্সিলি নিযুক্ত হইয়া যথারীতি মোকদ্দমা চালাইতে লাগিলেন। পূর্ব্বে বলা হইয়াছে যে এ অভিযোগে স্বয়ং সরকার বা ইংলণ্ডাধিপ ফরিয়াদী। বিচার প্রথানু- যায়ী অন্যান্য কার্য্যের পর ফরিয়াদী পক্ষের সাক্ষীর জবানবন্দী গৃহীত হইল।
Leave a Reply