বৈশ্বিক স্বাস্থ্য গবেষণার উন্নয়নে অগ্রগামী ভূমিকা ও উৎসবমুখর চেতনার প্রতিফলন
নিজস্ব প্রতিবেদক
বৈশ্বিক স্বাস্থ্য গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর,বি–র ৬৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপনে এর মহাখালী ক্যাম্পাসে আজ একটি প্রাণবন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়। আইসিডিডিআর,বি–র দীর্ঘ ইতিহাস ও অর্জনকে সম্মান জানাতে আনন্দঘণ এই উদযাপনে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের পাশাপাশি দাতা সংস্থা, গণমাধ্যম প্রতিনিধি এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের সমাগম ঘটে।
সকলকে অনুষ্ঠানে স্বাগত জানিয়ে আইসিডিডিআর,বি-র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. তাহমিদ আহমেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য ক্ষেত্রকে রূপান্তর করার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বিশেষভাবে সাম্প্রতিক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য চতুর্থ একক-ডোজ এইচপিভি ভ্যাকসিন সেকোলিনের অনুমোদন প্রদানে আইসিডিডিআর,বি-র ভূমিকার বিষয়ে বলেন। ড. তাহমিদ এই মাইলফলকটিকে সার্ভিকাল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন কারণ এটি এমন একটি রোগ যার ফলে প্রতি দুই মিনিটে একজন নারী মৃত্যুবরণ করেন। এর মধ্যে ৯০% মৃত্যু নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে ঘটে। তিনি আইসিডিডিআর,বি-র বিজ্ঞানী, গবেষক এবং কর্মীদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যাঁরা প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বব্যাপী শ্রেষ্ঠত্ব ও স্বীকৃতি এনে দিতে অবদান রেখেছেন।
অনুষ্ঠানে “স্থাপত্যের চেয়ে স্থাপত্য বড়: স্বাস্থ্যকর শহর গড়ে তোলার প্রক্রিয়া” শীর্ষক মূল বক্তব্য প্রদান করেন ড. কাজী খলিদ আশরাফ, ডিরেক্টর জেনারেল, বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ফর আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটেলমেন্টস। আইসিডিডিআর,বি-কে এর চমৎকার যাত্রার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে ড. আশরাফ বলেন, এটি বিশ্বব্যাপী মর্যাদাপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্য ও উদ্ভাবনে দশকের পর দশক ধরে এর অবদানের প্রশংসা করেন। ড. আশরাফ তাঁর উপস্থাপনায় স্থাপত্য এবং জনস্বাস্থ্যের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে শহরগুলোস্থাপত্যের সম্প্রসারিত কাজ হিসেবেজনস্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জ এবং সমাধানের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। তিনি ঢাকায় নগরায়ন নিয়ে একটি একটি মননশীল সমালোচনা উপস্থাপন করেন এবং আঞ্চলিক পরিকল্পনা, নদীর তীর সংরক্ষণ, প্লাবনভূমি গঠন ও সহযোগিতামূলক নগরনির্মাণকে উৎসাহিত করা সহ একটি স্বাস্থ্যকর, আরও বসবাসযোগ্য শহর গড়ে তোলার জন্য ১১টি কার্যকর ধারণা প্রস্তাব করেন।
গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার ফার্স্ট সেক্রেটারি (উন্নয়ন-স্বাস্থ্য) মি এডওয়ার্ডস ক্যাব্রেরাও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্যে আইসিডিডিআর, বি-এর অসামান্য অবদানের প্রশংসা করেন এবং উল্লেখ করেন যে কানাডা থেকে আগত দর্শনার্থীরা সবসময় এই প্রতিষ্ঠানের ব্যতিক্রমী কাজে গভীরভাবে মুগ্ধ হয়েছেন।
দিনটির উদযাপন আরও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে আইসিডিডিআর,বি-র মহাখালী প্রাঙ্গণে প্রাণবন্ত একটি ফান ফেয়ার বা আনন্দমেলার মাধ্যমে, যেখানে আইসিডিডিআর,বি-র কর্মীরা বিভিন্ন স্টলে নানা রকম পণ্য সামগ্রী নিয়ে আসেন। দর্শনার্থী এবং কর্মীদের এই মেলায় নানারকম পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, মুখরোচক খাবার আস্বাদনসহ একে অপরের সাথে মেলবন্ধনের মধ্য দিয়ে উৎসবটি আরও প্রাণবন্ত এবং আনন্দদায়ক মাত্রা পায়। এই মেলা একই সাথে আনন্দ ও একতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়, যা প্রতিষ্ঠানটির সামাজিক মেলবন্ধনের অনুভূতিকে প্রতিফলিত করে।
আইসিডিডিআর,বি-র সাসাকাওয়া মিলনায়তনে একটি প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনন্দমুখর উৎসবটি আরও প্রসারিত হয়, যেখানে আইসিডিডিআর,বি-র কর্মীরা তাদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিভা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে চিন্তা-উদ্দীপক নাটক থেকে শুরু করে মন্ত্রমুগ্ধকর ম্যাজিক শো, হাস্যরসাত্মক উপস্থাপনা, জনপ্রিয় ইংরেজি গান প্রাণবন্ত বাদ্যযন্ত্রের পরিবেশনার আয়োজনও ছিল। হাসি ও করতালিমুখর অনুষ্ঠানটি ছিল আইসিডিডিআর,বি-র সৃজনশীলতা ও প্রেরণার প্রতীক।
আইসিডিডিআর,বি তার ৬৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করার সাথে সাথে এটি উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে এবং শ্রেষ্ঠত্বের সাথে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো মোকাবেলায় এর প্রতিশ্রুতি বজায় রেখেছে। এই উদযাপন শুধুমাত্র এর প্রাতিষ্ঠানিক এবং বৈজ্ঞানিক সাফল্যগগুলোই নয়, বরং এর বৈচিত্র্যময় ও গতিশীল সামাজিক চেতনাকেও তুলে ধরে যা আইসিডিডিআর,বি-র অনন্য বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটায়।
আইসিডিডিআর,বি-র ৬৪-তম বার্ষিকী উদযাপন প্রোগ্রাম সম্পর্কে আরও বিশদ জানতে, ভিজিট করুন: https://youtu.be/D3sxvLHscoU
Leave a Reply