ম্যাকসিম গোর্কী
বার
রোগ তাঁকে আরো নীরস ক’রে তুলেছে। রোগের আগুনে তাঁর মধ্যে আরো কী একটা জিনিষ যেন ছাই হয়ে গেছে। অন্তরের দিক থেকে তিনি আরো লঘু হ’য়ে উঠেছেন। আরো স্বচ্ছ, আরো প্রতিরোধ- শক্তিহীন। তাঁর চোখ দুটি হ’য়েছে আরো উজ্জ্বলতর, দৃষ্টি আরো তীক্ষ্ণতর। তিনি সব কিছুই মনোযোগের সংগে শুনছেন। যেন কী তিনি ভুলে গিয়েছিলেন, তা আবার তাঁর মনে পড়েছে। যেন কিছু জানা, কিছু অজানার তিনি প্রতীক্ষা করছেন। ইয়াস্নাইয়া পলিয়ানাতে তাঁকে দেখে আমার মনে হ’য়েছিল, সব কিছুই তিনি জানেন। জানবার মতো আর কিছুই তাঁর নাই-তিনি সকল প্রশ্নের সমাধান ক’রে ব’সে আছেন।
তের
তিনি যদি মৎস্য হতেন, তবে তিনি নিশ্চয় কেবল মাত্র মহাসমুদ্রেই সন্তরণ করতেন। সংকীর্ণ সমুদ্রে, বিশেষ ক’রে পার্থিব নদীর অগভীর জলস্রোতে কখনই আসতেন না। তাঁর চারিদিকে এখানে ওখানে ছোটো খাটো মাছের দল বিশ্রাম করছে, ছুটে বেড়াচ্ছে। তিনি কী বলেন সেদিকে তাদের ভ্রূক্ষেপ নেই। তা তাদের পক্ষে প্রয়োজনীয় নয়, তাঁর নীরবতাও তাদেরকে অভিভূত আতংকিত করে না। তথাপি তাঁর নীরবতা সমস্ত কিছুকেই স্পর্শ ক’রে যায়। সে স্তব্ধতা যেন সংসার থেকে বিতাড়িত কোনো সন্ন্যাসীর স্তব্ধতা। তিনি প্রচুর কথা বলেন, সত্য। কিন্তু কয়েকটি বিষয়ে যেন কর্তব্য বোধেই নীরব থাকেন। এবং এই নীরবতাটুকু আরো গভীরতরভাবে অনুভব করা যায়। এমন কয়েকটি বস্তু আছে, যার সম্বন্ধে কেউ কারো কাছে কিছু বলতে পারে না। নিশ্চয়, তাঁরও মনে এমন কয়েকটি কথা ছিল, যে-গুলির সম্বন্ধে তিনি ভীত হ’য়ে উঠতেন।
Leave a Reply