সারাক্ষণ ডেস্ক
বন উজাড় কেবল জলবায়ুর ক্ষতি করে না, এটি কৃষকদের কোটি কোটি টাকার লোকসানও ঘটায়।
দশকের পর দশক ধরে ভুট্টা ও সয়াবিন উৎপাদন বাড়িয়ে ব্রাজিল একটি কৃষি শক্তিশালী দেশে পরিণত হয়েছে। তবে এর ফলে অ্যামাজন বনের বিশাল এলাকা ধ্বংস হয়েছে। এই ধ্বংস কৃষক ও পরিবেশবাদীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে।
অক্টোবরে প্রকাশিত একটি গবেষণায়, যা পরিচালনা করেছে ব্রাজিলের মিনাস গেরাইস ফেডারেল ইউনিভার্সিটি এবং রেইনফরেস্ট ফাউন্ডেশন নরওয়ে, দেখা যায় যে বন উজাড় কৃষকদের জন্যও ক্ষতিকর। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ব্রাজিলিয়ান অ্যামাজনে গাছ কেটে ফেলার ফলে শস্য উৎপাদন কমে গেছে, যার ফলে মোট প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। সয়াবিনের নিট আয় এই সময়ে ১০% এবং ভুট্টার আয় ২০% হ্রাস পেয়েছে।
জলবায়ু ও অর্থনীতিতে প্রভাব
গবেষণায় দেখা গেছে, গাছের ঘাম থেকে নির্গত জলীয় বাষ্প বড় ও ঘন বৃষ্টির মেঘ তৈরি করে, যা এলাকায় ঠাণ্ডা রাখে। বন উজাড়ের ফলে এই প্রাকৃতিক চক্র নষ্ট হয়, যা অ্যামাজনের তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়, যেখানে ৮০% এর বেশি বন ধ্বংস হয়েছে, সেখানে বর্ষার আগমন ১৯৮০ সাল থেকে ৭৬ দিন দেরিতে হচ্ছে। ১৯৯৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এই এলাকায় সয়াবিন চাষের সময় বৃষ্টিপাত ৪০% এবং ভুট্টার চাষের সময় ২৩% হ্রাস পেয়েছে। একই সময়ে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।
ভবিষ্যতের সতর্কবার্তা
বন উজাড়ের প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, কৃষকদের জন্য আরও কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। অনুমান করা হয়েছে যে ২০৫০ সালের মধ্যে এই ধারা চলতে থাকলে কৃষকরা বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার লোকসানের মুখোমুখি হবেন।
পুনর্বনায়নের সম্ভাবনা
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, যদি ব্রাজিলের প্যারো রাজ্যে ৫৫,০০০ বর্গকিলোমিটার কৃষিজমিতে পুনর্বনায়ন করা হয়, তাহলে বৃষ্টি গড়ে পাঁচ দিন আগে আসতে পারে, কিছু এলাকায় তা ১৯ দিন পর্যন্ত এগিয়ে আসতে পারে। এর ফলে প্রতি বছর ১৫২ মিমি বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে।
কৃষকদের প্রতিক্রিয়া
তবে, এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা কঠিন। ব্রাজিলের কৃষি প্রতিষ্ঠানগুলো এবং কৃষকেরা এমন গবেষণাকে সন্দেহের চোখে দেখে। তারা বন উজাড় বা জলবায়ু পরিবর্তনকে ফলনের হ্রাসের জন্য দায়ী মনে করে না।
গবেষণার প্রধান লেখক ব্রিটালডো সোয়ারেস-ফিলহো বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষতির উপর জোর দিলে কৃষকদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হতে পারে। তিনি মন্তব্য করেন, “তারা আমাদের কৃষি-বিরোধী বলে দোষারোপ করে, কিন্তু নিজেরাই কৃষি-আত্মহত্যা করছে।
Leave a Reply