সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৫ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ভারতে

  • Update Time : রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১.৩৩ পিএম
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তারের পর কারাগারে আছেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস (ফাইল ফটো)

পায়েল সামন্ত, কলকাতা

বাংলাদেশে হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পর সৃষ্ট উত্তেজনার রেশ ভারতেও দেখা গেছে৷ নয়াদিল্লি এ ব্যাপারে বার্তা দিয়েছে ঢাকাকে, জবাব দিয়েছে ঢাকাও৷

প্রতিবেশী বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গা থেকে সংঘর্ষের খবর মিলছে ভারতে৷ সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যমে উঠে আসছে, সংখ্যালঘুদের নিশানা করা হচ্ছে৷ আক্রমণের মুখে পড়ছেন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা৷

বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে সীমান্তের এপারেও৷ ওপারে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে বহু মানুষের ভারতে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়৷ দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে৷ এর পাশাপাশি রয়েছে আর্থ সামাজিক অভিঘাত৷

সব মিলিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তার প্রতিক্রিয়া মিলেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে৷ তারা বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক করেছে৷

ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর৷ বিদেশ প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং সংসদের বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকারকে ভারত বলতে চায়, তারা সে দেশে বসবাসকারী হিন্দু এবং সমস্ত সংখ্যালঘু মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক এবং তাদের প্রার্থনার জায়গা নিরাপদ রাখুক৷”

রাজ্যসভায় তার মন্তব্য, ‘‘সংখ্যালঘুসহ বাংলাদেশের সমস্ত নাগরিকের জীবন এবং স্বাধীনতা সুরক্ষিত রাখার প্রাথমিক দায়িত্ব সে দেশের সরকারের৷”

সব দলের নিন্দা

বাংলাদেশে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সহমত পোষণ করছে বিরোধীরাও৷ ডান থেকে বাম, সকলেরই এক সুর৷

সংসদে প্রথমবার নির্বাচিত হয়েছেন কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কা গান্ধী৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এক সন্ন্যাসীকে গ্রেফতার ও সেই দেশে হিন্দুদের উপর যে ধারাবাহিক আক্রমণের খবর সামনে আসছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক৷”

তার কথায়, ‘‘আমি এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আবেদন জানাতে চাই, বাংলাদেশে সরকারের কাছে এই বিষয়টি উত্থাপন করা হোক৷”

প্রাক্তন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী তথা কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেছেন, ‘‘সমস্ত ভারতীয়ই উদ্বিগ্ন, কারণ বাংলাদেশ আমাদের উল্টো দিকের পড়শি৷ তাদের ভালো থাকা নিয়ে আমরা চিন্তিত৷ শুধুমাত্র বিদেশ মন্ত্রকই নয়, সমস্ত ভারতীয় নাগরিক ঘটনার দিকে নজর রাখছেন৷”

তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা বিদেশের ব্যাপার৷ এ নিয়ে আমরা কোনও মন্তব্য করব না৷ তবে তৃণমূলের অবস্থান খুব স্পষ্ট৷ বিদেশে এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটলে ভারত সরকার যে অবস্থান নেবে, তৃণমূল তাকে সমর্থন করবে৷ বাংলাদেশে যা হয়েছে, তা দুর্ভাগ্যজনক৷”

কড়া প্রতিক্রিয়া মিলেছে বিজেপির পক্ষ থেকে৷ রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার প্রেস বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘চিন্ময় দাসের বিরুদ্ধে সমস্ত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা উচিত৷ বাংলাদেশের ধর্মস্থানকে সুরক্ষা দেওয়া উচিত এবং সংখ্যালঘুরা যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে৷”

বিজেপি, কংগ্রেস ইতিমধ্যেই কলকাতার রাস্তায় এ নিয়ে মিছিল করেছে৷ নামতে চলেছে বামেরা৷ একাধিক অরাজনৈতিক সংগঠন বিক্ষোভ দেখিয়েছে৷ বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্দেশে মিছিল করে এগিয়ে গিয়েছে৷ যদিও এই মিছিল রুখে দেয় পুলিশ৷

এদিকে, শুক্রবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে লিখেছে, ‘‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় উপহাইকমিশনের সামনে বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ নামের একটি সংগঠন আয়োজিত সহিংস বিক্ষোভের ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন৷ বিক্ষোভকারীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বাংলাদেশের উপহাইকমিশনের সীমানা পর্যন্ত চলে যায়৷ সেখানে বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের পতাকা পোড়ান এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রতিকৃতিতে আগুন দেন৷ বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে মনে হলেও উপ হাইকমিশনের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন৷”

কলকাতায় বাংলাদেশের উপ হাইকমিশন ও দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের সামনে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সংবাদমাধ্যম৷

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ঈশানী নস্কর বলেন, ‘‘শান্তি ও সংসদীয় গণতন্ত্র বাংলাদেশে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷ ইউনূস সরকার নির্বাচন করার আগে রাজনৈতিক সংস্কার এবং খানিকটা সংবিধান পাল্টানোর কথা বলেছে৷ এটা একটা দীর্ঘ ব্যাপার৷ কিন্তু তার মধ্যে এই যে মৌলবাদী শক্তির প্রকোপ আমরা দেখতে পাচ্ছি৷ সেটা কীভাবে সামাল দেওয়া যাবে, এটা ইউনূস সরকারের বিবেচনা করার দরকার৷ যে ধরনের দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে, সেটা ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা দরকার৷”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক, অধ্যাপক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী মনে করেন, “বাংলাদেশের যেটাকে অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলা হচ্ছে, সেটা মোটেও তা নয়৷ ভারতে সিএএ আইন তৈরি হয়েছে, তাতে বলে দেওয়া হয়েছে যে ২০১৪-র পরে যারা ভারতে এসেছেন তাদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না৷ এই কথা ভেবেই হয়তো বাংলাদেশের মানুষ ভারতে না এসে নিজেদের দেশে অস্তিত্বের লড়াই করতে শুরু করে দিয়েছেন৷ এই আন্দোলনে চিন্ময় স্বামী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন৷”

ডিডাব্লিউ ডটকম

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024