সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

বনমানুষদের নতুন জীবনের গল্প

  • Update Time : সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২.৩০ এএম

পিটার সি. বেকার

শিকাগোর লিংকন পার্ক চিড়িয়াখানায়, চিম্পাঞ্জিদের অন্য চিম্পাঞ্জিদের সঙ্গে মিশতে শেখানো হচ্ছে। শিশুদের কোলাহলপূর্ণ দর্শকদের উপেক্ষা করে বনমানুষরা নিজের মতো করে গাছের পাতা খুঁজে বেড়াচ্ছে এবং ছোট দোলনায় দোল খাচ্ছে। তবে চিড়িয়াখানার পেছনের একটি অংশে, জনসাধারণের চোখের আড়ালে, এমন একটি চিম্পাঞ্জি দল রয়েছে, যারা অপরিচিত মানুষ দেখলেই উত্তেজিত হয়ে ওঠে।

এলাই নামের এক শান্ত স্বভাবের তরুণ চিম্পাজি, চুল খাড়া করে আগ্রহের সঙ্গে এগিয়ে আসে। সুজি, এক শক্ত মানসিকতার নারী চিম্পাঞ্জি, ফটোগ্রাফার দেখে চিৎকার শুরু করে। “ক্যামেরার জন্য সে বিরক্ত হতে পারে,” বলেন প্রাইমেট বিভাগের কিউরেটর জিল ময়স।

এলাই এবং সুজি একসময় হলিউডে কাজ করত। তারা টিভি শো, মিউজিক ভিডিও এবং বিজ্ঞাপনচিত্রে উপস্থিত ছিল।

২০১৫ সাল পর্যন্ত চিম্পাঞ্জিদের উপর বিপন্ন প্রজাতি আইনের সুরক্ষা ছিল না। এখনও যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তিগতভাবে চিম্পাঞ্জি পোষা বা বিনোদনের জন্য তাদের ব্যবহার করার ওপর কোনো জাতীয় নিষেধাজ্ঞা নেই। এই প্রথা অনেক সময় বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।

প্রাইমেট বিশেষজ্ঞ এবং প্রাণী কল্যাণ সংগঠনগুলো অনেক প্রাক্তন পোষা ও পারফর্মিং চিম্পাঞ্জিকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করেছে। তাদের প্রচেষ্টার ফলে এলাই হলিউডে কাজ করা শেষ বড় বনমানুষ।

চিম্পাঞ্জি শিশুরা

এলাই ও সুজির শৈশব সম্পর্কে অনেক কিছুই অজানা। তাদের দুজনেরই জন্ম হয়েছিল মিসৌরি প্রাইমেট ফাউন্ডেশনে, যা একসময় পোষা ও পারফর্মিং চিম্পাঞ্জিদের অন্যতম সরবরাহকারী ছিল।

তবে ২০১৭ সালে পশু অধিকার সংগঠন পেটা ফাউন্ডেশন এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এতে চিম্পাঞ্জিদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখার অভিযোগ করা হয়। মামলা দীর্ঘায়িত হয় এবং পরবর্তীতে এই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়।

বনমানুষদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল অন্য চিম্পাঞ্জিদের সঙ্গে থাকা। কিন্তু অনেক চিম্পাঞ্জি শৈশব থেকেই মা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে এবং মানুষ হিসেবে বড় হয়, যা তাদের প্রাকৃতিক আচরণকে প্রভাবিত করে।

নতুন জীবন শুরু

এলাই ও সুজিকে শিকাগোর লিংকন পার্ক চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসার পর তাদের স্বাভাবিক চিম্পাঞ্জি জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু হয়। প্রথমে তাদের খাবার খাওয়ার অভ্যাস বদলানো হয়।

এলাই তার বিছানা আঁকড়ে ধরে দোল খেত এবং কখনো চিৎকার করত। এই ধরনের আচরণ তাদের শৈশবের মানসিক আঘাতের প্রমাণ। সুজি কখনো মানুষের সাহায্য চাইত।

তাদের জন্য নতুন বন্ধু খোঁজা হয়, এবং ধীরে ধীরে তারা অন্য চিম্পাঞ্জিদের সঙ্গে মিশতে শেখে। সুজি একটি নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে, এবং এলাই এখন অন্যান্য চিম্পাঞ্জিদের সঙ্গে বন্ধন গড়ে তুলেছে।

তাদের শারীরিক এবং মানসিক উন্নতির মধ্য দিয়ে, তারা নিজেদের মতো করে নতুন জীবনে অভ্যস্ত হচ্ছে। এলাই, যা আগে কখনো করতে পারেনি, এখন নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

“এটাই এর সৌন্দর্য,” বলেন ময়স। “সে যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারে।”

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024