শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:১১ পূর্বাহ্ন

টলস্টয়ের স্মৃতি (পর্ব- ০৮)

  • Update Time : রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৪.২০ পিএম

ম্যাকসিম গোর্কী

চৌদ্দ

খৃস্টের ধর্মপুত্র সম্পর্কে একটি কাহিনী তাঁর কাছে কে পাঠিয়েছিল। সেটিকে তিনি উচ্চকণ্ঠে পড়ে সুলার এবং শেখভকে শোনাছিলেন- তিনি এমন সুন্দরভাবে পড়তে পারতেন যে দেখলে আশ্চর্য হ’তে হয়। শয়তানেরা জমিদারদের উপর নির্যাতন করছে। এই ব্যাপারটি তাঁর কাছে বিশেষভাবে অত্যন্ত কৌতুকপ্রদ মনে হলো। কিন্তু এ কৌতুকের মধ্যে এমন কিছু ছিল, যা আমার ভালো লাগল না। তাঁর আনন্দের মধ্যে কাপট্য থাকতে পারে না। এবং কাপট্য নেই ব’লেই ব্যাপারটি আরো বিশ্রী ঠেকলো।

তারপর তিনি বললেন: “চাষারা কী সুন্দর গল্প বাঁধে। সবটুকুই সাদাসিদে, অল্প পরিমাণ কথা, প্রচুর পরিমাণ অনুভূতি। সত্যিকারের জ্ঞানে স্বল্প কথাই লাগে; যেমন ধরো ‘হরি হে, দয়া করো’।” যাই হোক, কাহিনীটা কিন্তু নিষ্ঠুরই ছিল।

পনের

আমার সম্বন্ধে তাঁর কৌতূহলটা জাতি-বিজ্ঞানের পর্যায়ে পড়ে। তাঁর চোখে আমি এমন একটি শ্রেণীর জীব, যার সংগে তাঁর পরিচয় নেই-এই মাত্র।

ষোল

আমি আমার লেখা “যাঁড়” গল্পটি তাঁকে প’ড়ে শোনালাম। তিনি হো হো ক’রে অনেকক্ষণ হাসলেন। “ভাষার প্যাঁচ” সম্পর্কে আমার জ্ঞানের প্রশংসা করলেন। “কিন্তু তোমার শব্দের প্রয়োগ খুব নিপুণ হয় নি। তোমার সমস্ত চাষারাই চটুল চাতুর্যের সংগে কথা বলে। কিন্তু বাস্তবিক জীবনে তার। যা বলে তা অর্থহীন, অসংলগ্ন লাগে। প্রথমে হঠাৎ তুমি বুঝতে পারবে না যে চাষাটি কী বলতে চাচ্ছে। কিন্তু ওটা তারা করে ইচ্ছে ক’রেই; তাদের নিজেদের কথার অর্থহীনতার আড়ালে তারা লুকিয়ে রাখতে চায়, অন্য লোকের মনে কী আছে, তাকে তা প্রকাশ করতে দেওয়ার তীব্র ইচ্ছাকে। কোনো সত্যকারের চাষা, সে হঠাৎ জানতে দেবে না যে তার মনে কী আছে। দেওয়াটা তার পক্ষে লাভজনক নয়। সে জানে, মানুষে বোকা মানুষের কাছেই ঘুর-প্যাঁচ ছেড়ে অকপটে এগিয়ে আসে। আর এইটি সে চায়ও। তার সামনে তোমার কিছুই গোপন থাকবে না। ফলে এক নিমেষেই সে তোমার সমস্ত দুর্বলতাগুলো দেখতে পাবে। সে সন্দিগ্ধ; তার মনের কথাটি সে তার স্ত্রীকে বলতেও ভয় করে। কিন্তু তোমার প্রত্যেকটি গল্পে চাষাদের কাছে সব কিছুই খোলাখুলি হ’য়ে পড়ে-এ যেন বিশ্ব- বিজ্ঞানের সভা বসেছে। তারা সবাই কাটাকাটা কথা বলে; জীবনে তেমনটি ঘটেও না। তাছাড়া রুশ ভাষার পক্ষে কাটাকাটা কথাগুলো মোটেই স্বাভাবিক নয়।”

“কিন্তু প্রবাদ আর প্রবচনগুলো?”

“সে-কথা আলাদা। সেগুলো আজকের তৈরী নয়।”

“কিন্তু আপনি নিজেও তো অনেক সময় কাটা-কাটা কথার ব্যবহার করেন।”

“কখনো না। ওই দ্যাখো, আবার তুমি সব কিছুতেই রং মাখাচ্ছ; মানুষ আর প্রকৃতি দুটোতেই-বিশেষ ক’রে মানুষে। লিয়েস্কভ-ও এমনি ক’রে সব কিছুতে রং মাখাতেন; তিনি ছিলেন কৃত্রিমতার পক্ষপাতী; তাই তাঁর লেখা আজ আর কেউ পড়ে না। কাউকে তোমার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে দিও না; কাউকে ভয় কোরো না, তা হ’লেই তোমার পক্ষে সব কিছু ঠিক হ’য়ে যাবে।”

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024