শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:০৩ পূর্বাহ্ন

জ্যাকসনের নাটকীয় পতন: দুর্নীতি,ষড়যন্ত্র ও লড়াই

  • Update Time : সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১.৩১ পিএম

সারাক্ষণ ডেস্ক 

প্রায় দুই দশক আগে, মিসিসিপির রাজধানী জ্যাকসনের শহর নেতারা একটি নতুন হোটেল নির্মাণের জন্য একটি চুক্তি করেন। তারা একটি চকচকে কনভেনশন সেন্টারের পাশে ফাঁকা জমিতে নির্মাণ করতে $১০ মিলিয়ন ঋণ দেয়। তবে এলাকা ছিল পরিত্যক্ত, এবং কেউ সেই জমির জন্য দরপত্র জমা দেয়নি।এই পরিস্থিতি পাল্টায় গত বছর, যখন ন্যাশভিলের দুই ডেভেলপার জ্যাকসনের জেলা অ্যাটর্নি জোডি ওয়েন্সের সঙ্গে রাজধানীর কাছাকাছি একটি সিগার লাউঞ্জে দেখা করেন। তারা জানতে চায় কিভাবে একটি চুক্তি করা যায়। ওয়েন্স তাদের বলেন, মেয়রের অনুমোদন প্রয়োজন, এবং $১ লাখই যথেষ্ট হবে।  

মেয়রের অনুমোদন পাওয়ার পর, তারা ফ্লোরিডায় একটি প্রাইভেট জেটে উড়ে যায়। মিয়ামির একটি ইয়টে তারা মেয়রের হাতে একটি চেক ও ওয়েন্সের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেয়।কিন্তু ওই ডেভেলপাররা প্রকৃতপক্ষে এফবিআই এজেন্ট। ২৩ অক্টোবর, ওয়েন্স ও লুমুম্বার বিরুদ্ধে ঘুষ ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়।মেয়রের সমর্থকরা অভিযোগ করে, এই ষড়যন্ত্র আসলে শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থীদের মস্তিস্কপ্রসূত। তারা বলেন, এটি মেয়রকে হটানোর ষড়যন্ত্র।

তবে এই মামলা জ্যাকসনের নিম্নগামী অবস্থার উপর আরেকটি আঘাত। পানীয় জলের সমস্যা, ময়লার সমস্যা এবং হত্যা হার বেড়ে যাওয়া শহরের বড় সমস্যা।মেয়রের বিরোধীরা বলেন, তিনি অযোগ্য লোকদের দিয়ে প্রশাসন চালিয়েছেন এবং দুর্নীতির পথ উন্মুক্ত করেছেন।তবে তার সমর্থকরা বলেন, তিনি ব্ল্যাক ন্যাশনালিজম ও শহরের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন।এখন মেয়রের সমর্থকরা আরও র‌্যাডিকাল প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত।

“যুদ্ধ শুরু হয়েছে, আমরা পিছপা হব না,” বলে মন্তব্য করেন এক কর্মী। জ্যাকসনের এই সংকট শুধু একটি শহরের রাজনীতি নয়, বরং এটি বৃহত্তর সামাজিক ও জাতিগত প্রশ্নের প্রতিফলন। চোকওয়ে আন্তার লুমুম্বার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে ব্ল্যাক ন্যাশনালিজমের সঙ্গে যুক্ত। তার বাবা, চোকওয়ে লুমুম্বা সিনিয়র, রিপাবলিক অফ নিউ আফ্রিকা নামে একটি কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদী দলের নেতা ছিলেন। তিনি টুপাক শাকুর এবং ব্ল্যাক প্যান্থারের উচ্চপর্যায়ের নেতা গেরোনিমো প্র্যাটের মতো ব্যক্তিত্বের আইনি পরামর্শক ছিলেন।

চোকওয়ে আন্তার লুমুম্বা তার বাবার পথ অনুসরণ করে ব্ল্যাক অটোনমির পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তিনি তার শহরের ওপর রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিহত করেছেন এবং মিসিসিপির সবচেয়ে কালো শহর হিসেবে জ্যাকসনের স্বাতন্ত্র্য ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন।

তবে তার প্রশাসনের ব্যর্থতা স্পষ্ট। পানীয় জল সংকট, অপরাধ বৃদ্ধি এবং মৌলিক পরিষেবা দেওয়ার অক্ষমতা তার নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাছাড়া, দুর্নীতির অভিযোগ তার অবস্থানকে আরও দুর্বল করে তুলেছে।

তার বিরোধীরা তাকে একজন ব্যর্থ রাজনীতিবিদ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যিনি দায়িত্বহীনতার সঙ্গে শহরের আর্থিক পরিস্থিতি অবনতি ঘটিয়েছেন। তবে তার সমর্থকরা বলেন, এটি তার প্রশাসনের ওপর শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের ষড়যন্ত্র।

এই মামলা শুধুমাত্র চোকওয়ে লুমুম্বার ভবিষ্যত নয়, বরং জ্যাকসনের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অস্থিতিশীলতার দিকেও আলোকপাত করে। তার সমর্থকরা বলছেন, মেয়র দোষী সাব্যস্ত হলেও আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে। “এই যুদ্ধ এখানেই শেষ নয়,” বলেন দানিয়েল হোমস। “আমাদের আন্দোলন আরও আক্রমণাত্মকভাবে চলবে।”

এই সংকটের সমাধান জ্যাকসনের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে। এটি শুধু একজন মেয়রের রাজনৈতিক ভাগ্যের বিষয় নয়, বরং একটি শহরের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা এবং সামাজিক বৈষম্যের প্রতিফলন।

এই পুরো ঘটনা আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য এবং কৃষ্ণাঙ্গ স্বাধীনতার সংঘর্ষকে আবার সামনে এনেছে। চোকওয়ে আন্তার লুমুম্বার মতো নেতার ভবিষ্যত কেবল আদালতে নয়, বরং জনগণের সিদ্ধান্তেও নির্ভরশীল।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024