শিবলী আহম্মেদ সুজন
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে।যার মধ্যে একটি নিদর্শন হচ্ছে ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। যা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। বাংলাদেশে ২৩৯ টির মতো জমিদার বাড়ি রয়েছে। এই এক-একটি জমিদার বাড়ির সাথে নানা রকমের ইতিহাস জড়িয়ে আছে।তেমনি জমিদার হরিচরণ রায় চৌধুরীর জমিদার বাড়িকে ঘিরেও ইতিহাস রয়েছে।
বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর গ্রামে শ্যামপুর জমিদার বাড়ি অবস্থিত। প্রায় ১৮০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জমিদার হরিচরণ রায় চৌধুরী ইংরেজি বর্ণমালা এল অক্ষরের জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন।এই জমিদার বাড়িটি ইতিহাসের এক অমূল্য রত্ন।স্থানীয়দের কাছে জমিদার বাড়িটি রায় চৌধুরীর বাড়ি এবং নকিপুর জমিদার বাড়ি নামেও পরিচিত।
হরিচরণ রায় চৌধুরী ছিলেন সেসময়ের একজন প্রভাবশালী জমিদার। সেই সুবাদে শ্যামপুর জমিদার বাড়ির আশেপাশে গড়ে ওঠে একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। অন্যান্য জমিদারদের মতো হরিচরণ রায় চৌধুরী সম্পদ ও বিলাসিতায় মত্ত ছিলেন না। তার জমিদারী সময়ে শ্যামনগর তথা সাতক্ষীরায় অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ হয়েছিল। তিনি রাস্তাঘাট, খাল খনন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন।
শ্যামপুর জমিদার বাড়িটি একটি দুইতলা বিশিষ্ট ভবন।জমিদার বাড়িটির ভিতরে দুটি শিব মন্দির, একটি চিকিৎসালয়, নহবতখানা, পূজা মণ্ডপ, দিঘী এবং পুকুর রয়েছে।তাছাড়া বাড়ির আশেপাশে বড় উঠনে প্রতিবছর দূর্গাপূজা উদযাপন করা হত। এই পূজা উপলক্ষে একটি বিশেষ পাকা প্যান্ডেল নির্মাণ করা হত, যা গ্রামবাসীদের মধ্যে এক বিশেষ ঐতিহ্য হয়ে উঠেছিল।
বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী নকিপুর গ্রামের এই জমিদার বাড়িটি অবহেলায় ও অপরিচর্যার শিকার। সংস্কার না করার ফলে ইট ও সুরকির খসে পড়ার পাশাপাশি, নানা ধরনের গাছপালা ও লতাপাতা ভবনটিকে ঘিরে ধরেছে। ইতিহাসের সাক্ষী বহু বছরের পুরাতন জমিদার বাড়িটি এখন ভূতুরে বাড়িতে পরিনত হয়েছে।দেশের অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনগুলোর মধ্যে সাতক্ষীরার জমিদার হরিচরণ রায়ের জমিদার বাড়িটি অন্যতম। এই বাড়িটির সঠিকভাবে পরিচর্যা ও সংস্কার করা হলে অন্যান্য নিদর্শনগুলোর মত এই জমিদার বাড়িটিও একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এতে করে পর্যটন শিল্প আরও উন্নতির দিকে ধাবিত হবে।
তাছাড়া যেসকল পর্যটক সুন্দরবনে ঘুরতে যেতে চান তাদের জন্য জমিদার বাড়ি থেকে সুন্দরবনের সড়ক পথে যাওয়াটা হবে আরও সহজ।সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা থেকে বাসে ৪৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েই পৌঁছে যাবেন সুন্দরবন। শ্যামনগর উপজেলা থেকে সরাসরি মুন্সিগঞ্জ গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যতদূর চোখ যাবে শুধুই দেখবেন সুন্দরবনের সবুজ আবহ।
Leave a Reply