সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৩৭ অপরাহ্ন

টলস্টয়ের স্মৃতি (পর্ব- ১০)

  • Update Time : মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩.৫০ পিএম

ম্যাকসিম গোর্কী

উনিশ

আমরা ইউশপভ পার্কে বেড়াচ্ছিলাম। তিনি মস্কাও শহরের অভিজাত শ্রেণীর লোকদের আচার-ব্যবহার সম্পর্কে চমৎকার ভাবে বর্ণনা করছিলেন। ওদিকে একটি ফুলের কেয়ারিতে একটি রুশ চাষার মেয়ে সমকোণ হ’য়ে নুয়ে প’ড়ে কাজ করছিল। বিরাট চেহারা মেয়েটির। হাতী দাঁতের মতো শাদা দু’টি পা। দশ পাউণ্ড ওজনের দোদুল্যমান দু’টি স্তন। তিনি মনোযোগের সংগে মেয়েটির পানে তাকালেন।

“এই ভাস্করের হাতে খোদাই-করা মূর্তিগুলিই দেশের সকল সমারোহ, সকল মহিমাকে আজো বাঁচিয়ে রেখেছে। কৃষাণ-কৃষাণীরা যে কেবল তাদের শ্রম দিয়ে, বা তারা যে কর দেয় তা দিয়েই এমনটি করছে তা নয়; তারা তা করছে যথার্থ পক্ষে তাদের রক্ত দিয়ে। যদি অভিজাত সম্প্রদায়ের লোকেরা ওই মেয়েটির মতো ঘোটকীদের সংগে মাঝে মাঝে সহবাস না করতো, তবে বহু আগেই তারা নিশ্চিহ্ন নিঃশেষ হ’য়ে যেতো। আমাদের সময়কার যুবকেরা যে ভাবে শক্তির অপচয় করতো, তার শাস্তি না হওয়াই ছিল অসম্ভব। কিন্তু তারা বিবাহিতা চাষার মেয়েদের সংগে যে-ব্যভিচার করতো, তার ফলে সুন্দর একটি সংকর জাতির হোতো সৃষ্টি। এমনিভাবে চাষার মেয়েদের শক্তি ওদের রক্ষা করতো। সেই শক্তি আজ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। অভিজাত সম্প্রদায়ের অর্ধেকটা নিজের শক্তি ব্যয় করেছে নিজের ওপর, আর বাকী অর্ধেকটা নিজের রক্তকে মিশিয়ে নিয়েছে চাষীর তাজা রক্তের সংগে। এমনিভাবে চাষীর রক্তেরও একটু রকমফের ঘটেছে। এর দাম আছে।”

কুড়ি

ফরাসী ঔপন্যাসিকদের মতো মেয়েদের সম্পর্কে তিনি কথা বলতে যেমন সর্বদা প্রস্তুত থাকেন, কথাও তেমনি বলেন অনর্গল। কিন্তু বলেন, রুশ চাষীদের মতন অমার্জিত রুচির সংগে। পূর্বে এই ব্যাপারটি আমার কাছে বিশ্রী লাগতো। আজকে আমণ্ড পার্কে তিনি আণ্টন শেখভকে প্রশ্ন করলেন:

“তোমার বয়স যখন কাঁচা ছিল, তখন তুমি বহু মেয়ের সংগে ব্যভিচার করেছ, না?”

আন্টন পাােভিচ একটু বিব্রত হাসি হেসে দাড়ি চুলকে অস্ফুট কণ্ঠে কী বললেন শোনা গেল না। লিও নিকোলাইয়ে ভিচ সমুদ্রের পানে তাকিয়ে থেকে বললেন, “আমি তো ছিলাম অক্লান্ত…..।”

কথাগুলো তিনি অনুশোচনার সুরেই বললেন এবং কথাগুলোর শেষে একটা লোনা লোনা চাষাড়ে শব্দ জুড়ে দিলেন। আমি এই প্রথম লক্ষ্য করলাম, কতো সহজভাবেই না এই শব্দটি তিনি প্রয়োগ করলেন। মনে হোলো, এর চেয়ে ব্যবহারের উপযোগী কোনো শব্দই যেন তিনি জানেন না। তাঁর গুম্ফাবৃত ওষ্ঠাধর থেকে নির্গত ওই ধরণের কথাগুলি অত্যন্ত সহজ এবং স্বাভাবিক লাগে। সেপাইদের মুখে ওই কথায় যে অমার্জিত নোংরাভাবটা থাকে, তা এতোটুকুও রইল না। তাঁর সংগে আমার প্রথম সাক্ষাতের কথা মনে পড়ল। তখন তিনি “ভারিয়েংকা ওলিয়েশোভা” এবং “ছাব্বিশ ও এক” গল্প সম্বন্ধে আলোচনা করেন। সাধারণ ভাবে দেখলে সেদিন তিনি যা বলেছিলেন, তা এক গুচ্ছ অশ্লীল কথা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আমি বোকা ব’নে গিয়েছিলাম, এমন কি আহতও হয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, তিনি বুঝি ভেবেছেন, এই ধরণের ভাষা ছাড়া অন্য কিছুই আমার কাছে বোধগম্য নয়। এখন বুঝছি: আমার আহত হওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হয় নি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024