ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
শাসন কাঠামোর মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে ছিলেন সাপাইনকা (Sapa Inca) এবং তার স্ত্রী-রা। এদের নিয়ন্ত্রণ ছিল খুবই কড়া এবং রক্ষণশীল। এর পরেই স্থান ছিল প্রধান পুরোহিত এবং সেনা প্রধান বা কমাণ্ডার ইন-চিফের। এর পরের মর্যাদায় ছিল চারজন আপু (Apus) আঞ্চলিক সেনাকমাণ্ডার। এর পরে ক্ষমতার বিন্দুতে ছিলেন মন্দির-এর পুরোহিতবর্গ।
সঙ্গে ছিলেন স্থপতি, প্রশাসক এবং সেনাধ্যক্ষ (Army generals)। সামাজিক মর্যাদার শ্রেণিবিন্যাসে এরপরে ছিলেন শিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ, সেনাদের ক্যাপ্টেন এবং ইনকাদের নিজস্ব হিসাবরক্ষক (Accountants)। সবচেয়ে নীচে ছিল জাদুকর, চাষী, পশুপালক পরিবার ইত্যাদি। ইনকা সাম্রাজ্য এই প্রশাসনিক বিন্যাস নিয়ে চলেছিল কয়েকশ বছর।
আতাহুলকার শাসনকালে বাইরে থেকে কিছু বাদামি ও হাল্কা চামড়ার লোক এসে জড়ো হয়। এর পরে প্লেগ ও নানা কারণে ইনকা সাম্রাজ্যের কিছু ক্ষতি হয়। এই রোগজনিত ছোট মহামারিতে অনেক লোক মারা যায়। এরপরে যারা জীবিত ও সক্রিয় ছিলেন তাদের স্প্যানিশ আক্রমণকে প্রতিহত করতে হয়। ইনকা সমাজ-এর গঠন প্রধানত আদিবাসী গোষ্ঠীদের নিয়ে। বিভিন্ন আদিবাসী এবং জনজাতিগোষ্ঠীকে পরাজিত করে ইনকাদের বহর ক্রমশ বেড়েছিল।
এইভাবে নিজেদের লোকসংখ্যা একটা সময়ে ৭০ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এই আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে সংযুক্ত হয়েছিল পারাকাসরা (Paracas)। এইভাবে বিভিন্ন জনজাতির মিশ্রণে তাদের মধ্যে একটা সাধারণ ভাষাও গড়ে উঠেছিল যার নাম হল ‘কেচুয়া’ (Quechua) এই বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর মিশ্রণের মধ্যে উপাদান হিসেবে ছিল নানা ইতিহাস, ঐতিহ্য লোকপুরাণ (Myth) লোকগাথা (Legend)।
এইসব নানাবিধ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর মধ্য থেকে নতুন অনেক কিছু পাবার এক সনিষ্ঠ প্রয়াসে বিশ্বাসী এই ইনকারা। আমাউতাস (Amautas) নামে এক শ্রেণির বুদ্ধিমান জ্ঞানী পুরুষ মানুষের ইতিহাস ঐতিহ্যকে চর্চা করেছিল এবং তারা বিশ্বাসের অঘটন, বিস্ময়কর রূপ চিহ্নিত করার জন্য মিথ-এর সংজ্ঞাকে নতুন রূপ দিয়ে চিত্রিত করেছিল।
(চলবে)
Leave a Reply