ম্যাকসিম গোর্কী
একুশ
কথাগুলি ব’লে তিনি বিজয়গর্বে হাসলেন। মাঝে মাঝে তিনি এমন শান্ত উদার হাসি হাসেন যে, মনে হয় তিনি যেন এমন একটি মানুষ যিনি অত্যন্ত কঠিন কিছু বস্তুকে আয়ত্ত করেছেন, বা যাঁর ওপর থেকে কোনো শাণিত সূচীমুখ বেদনার ভার অকস্মাৎ অপসারিত হয়েছে। প্রতিটি চিন্তা তাঁর আত্মার ওপর জোঁকের মতো এসে বসে। হয় ঐ চিন্তাটিকে তিনি তৎক্ষণাৎ সজোরে তুলে ফেলেন, নয় তাকে তাঁর রক্ত পান করবার সুযোগ দেন এবং রক্ত পান করার পর যখন তা পরিপূর্ণ ও নিটোল হয়ে ওঠে, তখন আপনা থেকে তা খসে পড়ে।
তিনি সুলার এবং আমাকে “ফাদার সার্জিয়াসের অধঃপতনের” অন্যরূপ একটি দৃশ্য পড়ে শোনাচ্ছিলেন-দৃশ্যটি নিষ্করুণ। সুলার ঠোঁট বাঁকিয়ে অস্বস্তির সংগে এপাশ ওপাশ করতে লাগল।
লিও নিকোলাইয়েভিচ প্রশ্ন করলেন, “ব্যাপার কি?….তোমার ভালো লাগছে না?”
“অত্যন্ত নির্মম, যেন ডস্টইয়েভ স্কির লেখা। নোংরা মেয়ে, মাই দুটো পাউরুটির মতো, ইত্যাদি। লোকটা পাপই যদি করলো, তবে কোনো সুন্দরী স্বাস্থ্যবতী মেয়ের সংগে করলো না কেন?” “তাহ’লে তো ওই পাপের কোনো কৈফিয়ৎ থাকে না। এখন একটা কৈফিয়ৎ আছে, মেয়েটার প্রতি ওর করুণা। মেয়েটা যে রকম দেখতে, তাতে তাকে কে চাইবে বলো?” “কিন্তু আমি বুঝতে পারি না….”
“পৃথিবীতে বহু জিনিষ আছে, যা তুমি বোঝো না লিওভুশকা। তুমি তো আর প্রাজ্ঞ নও।…
এমন সময় সেখানে আন্দ্রেই স্বভিচের স্ত্রী এসে পৌঁছলেন, সুতরাং ছেদ পড়ল। অতঃপর ভদ্রমহিলা এবং সুলার বাইরে গেলে লিও নিকোলাইয়েভিচ আমাকে বললেন, “আমি যতো মানুষ জানি, তাদের মধ্যে সব চেয়ে শুদ্ধ হোলো ওই লিওপোল্ড। ও হোলো এমনিটি: ও যদি কখনো কোনো খারাপ কাজ ক’রে থাকে, তবে তা করবে কারো জন্যে দয়া পরবশ হ’য়ে।”
Leave a Reply