আর্কাদি গাইদার
অষ্টম পরিচ্ছেদ
এর তিন দিন পর পুলিশ-থানায় ডাক পড়ল মা-র। তাঁকে জানানো হল যে তাঁর স্বামী ফৌজ থেকে পালিয়েছেন। তাঁকে একটা লেখা বিবৃতিতে সইও করতে হল। বিবৃতিতে লেখা ছিল, মা তাঁর স্বামীর বর্তমান খবরাখবর জানেন না, কিন্তু যদি তিনি কখনও স্বামীর খোঁজ পান তাহলে অবিলম্বে, কোনো রকম ইতস্তত
না করে, অবশ্যই সে-খবর কর্তৃপক্ষের কানে তুলবেন। স্থানীয় পুলিশের বড়কর্তার ছেলের মারফত পরদিন ইশকুলের সবাই জানতে পারল, আমার বাবা ফৌজ থেকে ফেরার হয়েছেন।
সেদিন বাইবেল-ক্লাসে ফাদার গেন্নাদি মহামান্য সম্রাট ও স্বদেশের প্রতি অনুরক্তি এবং দেশরক্ষার শপথ গ্রহণের পরম পবিত্রতা সম্বন্ধে ছোটখাট একটি নীতিবাচক ধর্মোপদেশ দিলেন। জাপানী যুদ্ধের সময় একজন সৈনিক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাবার চেষ্টা করতে গিয়ে কীভাবে এক হিংস্র বাঘের কবলে প্রাণ দিয়েছিল, সেই ঐতিহাসিক উদাহরণটি বক্তৃতার মধ্যে জুড়ে দেয়ায় তাঁর নীতিকথার গুরুত্ব বেশ বেড়ে গিয়েছিল।
ফাদার গেন্নাদির মতে, ওপরের ওই ঘটনা ছিল ঐশ্বরিক দূরদর্শিতা ও সদয় তত্ত্বাবধানেরই ফলস্বরূপ। পলাতকের ওপর তাই কঠিন শাস্তিবিধানের ব্যবস্থা হল। এটা যে অলৌকিক ব্যাপার ছিল তার প্রমাণ, বাঘটি স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী
একসঙ্গে সবটা না-খেয়ে ফেলে সৈন্যটির প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছি’ড়ে ছি’ড়ে আলাদা করে ফেলে রেখে গিয়েছিল।
এই ধর্মোপদেশ কিছু, কিছু ছেলেকে অভিভূত করে ফেলল। ওই দিন মাঝের বিরতির সময় তোরোপিগিন ভয়ভক্তির চোটে গবেষণা করে ফেলল যে সেই বাঘটা আসলে সত্যিকার বাঘ ছিল না, হয়তো স্বয়ং দেবদূত মিখাইলই বাঘের মূর্তি ধরে এসেছিলেন।
সিকা গোরবৃস্কিন কিন্তু এ-কথায় একমত হল না। সে বললে, বাঘটি মিখাইল ছিল কিনা সন্দেহ, কারণ মিখাইলের শাস্তিবিধানের ধারা সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি কখনও দাঁত ব্যবহার করেন না, তরোয়াল দিয়ে কুপিয়ে কিংবা বর্শা দিয়ে বি’ধে মারেন।
Leave a Reply