আর্কাদি গাইদার
অষ্টম পরিচ্ছেদ
বেশির ভাগ ছেলেই এতে একমত হল। এর কারণ, ক্লাসরুমের দেয়ালে টাঙানো পবিত্র ছবিগুলির একটিতে দেবদূতদের সঙ্গে নরকের রক্ষীদের লড়াইয়ের একটি দৃশ্য ছিল। আর তাতে মিখাইলকে বর্শাধারী হিসেবে দেখানো হয়েছিল। আর সেই বর্শার ফলকে গাঁথা তিনটে ভূতপ্রেতকে ছটফট করতে আর আরও তিনটেকে পা-ওপরে-মাথা-নিচে-করে সোজা তাদের মাটির তলাকার আশ্রয়ের দিকে দৌড় দিতে দেখা যাচ্ছিল।
এর দু-দিন পর আমাকে জানানো হল যে টিচার্স কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ইশকুল পালানোর মতো অন্যায়ের জন্যে আমাকে আচার-আচরণের ঘরে খারাপ নম্বর দেয়া হবে।
সাধারণভাবে এর অর্থ দাঁড়াল এই যে এর পরে আর কোনো অন্যায় করলে আমাকে ইশকুল থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে।
এরও তিন দিন পর আমার হাতে একটা লিখিত বিজ্ঞপ্তি ধরিয়ে দেয়া হল। তাতে বলা হয়েছিল, আমার মাকে আমার ইশকুলের সেই বছরের প্রথম ছ-মাসের মাইনের পুরো রুবল অবিলম্বে জমা দিতে হবে। বাবা সৈনিক হিসেবে যুদ্ধে গিয়েছিলেন বলে এর আগে পর্যন্ত আমাকে পুরো মাইনের অর্ধেক দিতে হত।
আমার জীবনে সে-ই শুরু হল কঠিন সময়। আমার নাম দেয়া হল ‘ফেরারীর ছেলে’। কী লজ্জা! যে-সব ছাত্রের সঙ্গে আগে আমার বন্ধুত্ব ছিল, একে একে দূরে সরে গেল তারা। অন্যেরা, যারা তখনও আমার সঙ্গে মিশত, তারাও কেমন অদ্ভুত আচরণ শুরু করল, যেন আমার একটা ঠ্যান্ড কাটা পড়েছে, কিংবা আমার পরিবারে কেউ সদ্য মারা গেছে। ক্রমে ক্রমে সকলের কাছ থেকে সরে এলুম আমি, খেলাধূলোয় যোগ দেয়াও ছেড়ে দিলুম, বন্ধ করলুম দলের সঙ্গে ভিড়ে অন্য দলের সঙ্গে লড়াই করা আর ক্লাসের ছেলেদের বাড়ি যাওয়া।
হেমন্তের লম্বা লম্বা বিকেল আর সন্ধেগুলো হয় বাড়িতে, নয়তো তিকা কিন আর তার পাখিদের সঙ্গে কাটাতে লাগলুম।
ওই সময়টায় তিমুস্কার সঙ্গে ভারি ভাব জমে উঠল। ওর বাবাও আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন। তবে মাঝে মাঝে কেন যে তিনি আড় চোখে স্থিরদৃষ্টিতে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতেন, তারপর কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে একটাও কথা না-বলে ঝমঝম করে চাবি বাজিয়ে চলে যেতেন, তা কিছুতেই বুঝতে পারতুম না।
Leave a Reply