আর্কাদি গাইদার
অষ্টম পরিচ্ছেদ
শহরেও সে-সময়ে অদ্ভুত সব পরিবর্তন ঘটছিল। লোকসংখ্যা দেখতে দেখতে বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেল। দোকানগুলোর সামনে ক্রেতার লাইন পাড়া ছাড়িয়ে লম্বা হয়ে উঠতে লাগল। সর্বত্রই লোকে গোল হয়ে ভিড় জমিয়ে দাঁড়াত, প্রতিটি রাস্তার মোড়ে জমত জটলা। অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন অবতারদের প্রতিমূর্তি কাঁধে বয়ে একটার পর একটা ধর্মীয় শোভাযাত্রার আনাগোনা শুরু হল। হঠাৎ-হঠাৎ নানারকম আজগবি সব গুজব রটতে লাগল।
কখনও বা শোনা গেল, প্রাচীন খ্রীস্টধর্ম প্রবক্তারা সেরেঝা-নদীর ওপর-মুখে যে-সব হ্রদ আছে তাদের পারের বনে চলে যাচ্ছেন। আবার কখনও শোনা গেল, নদীর ভাঁটায় যে-সব বেদে বাস করে তারা নাকি জাল, অচল রুল চালাচ্ছে, আর ওই সব জাল রুলে বাজার ছেয়ে যাওয়ায় নাকি জিনিসপত্র এত আক্রা হয়ে উঠেছে। আবার একদিন এক রীতিমতো ভয়ের খবর রটল যে তার সামনের শুক্রবার রাত্রে ইহুদি ঠ্যাঙানো হবে, কারণ ওদের গুপ্তচরগিরি আর বিশ্বাসঘাতকতার জন্যেই নাকি লড়াই শেষ হতে চাইছে না।
হঠাৎ দেখা গেল, শহরটা ভবঘুরেতে ভরে গেছে। কোথা থেকে যে এল ওরা, ঈশ্বর জানেন। কেবল শোনা যেতে লাগল, এখানে কে বা কারা যেন একটা তালা ভেঙেছে, ওখানে একটা ফ্ল্যাটে সি’দ কেটে চুরি হয়ে গেছে, এই সব। শহরে ছোট একটা কসাক-বাহিনী মোতায়েন হয়ে গেল। গোমড়া-মুখো, কপালের ওপর চুল- দোলানো কসাকরা ঘন হয়ে সার বেধে বিকট চিৎকার আর হপহপ শব্দ করতে করতে যখন একবার রাস্তা দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে যাচ্ছিল, সহ্য করতে না-পেরে মা তখন জানলার কাছ থেকে সরে এসে বলেছিলেন:
‘বহুদিন ওগুলোর দেখা পাই নি… সেই উনিশ শো পাঁচ সালের পর থেকে। আবার নেত্য শুরু করেছে এখন।’
বাবার কাছ থেকে কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। আমার মনে মনে একটা সন্দেহ ছিল যে বাবা বোধহয় নিজনি নভগরোদের কাছে সর্মোভোতে আছেন। অবিশ্যি এটা নেহাতই একটা অনুমান ছিল মাত্র। চলে যাবার আগে বাবা মাকে তাঁর ভাই নিকোলাই সম্বন্ধে নানা কথা জিজ্ঞেস করছিলেন। আর নিকোলাই-মামা সর্মোভোর একটা গাড়ি তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। এই সব থেকেই আমার ওই ধারণার উৎপত্তি। এক দিন- তখন শীত পড়ে গেছে তিঙ্কা কিন ইশকুলে আমার কাছে এসে একটু আড়ালে যেতে বলল। ওর রহস্যজনক হাবভাবে আমার যত না কৌতূহল হল তার চেয়ে অবাকই হয়েছিলুম বেশি। নেহাতই উদাসভাবে ওর পিছু পিছু ফাঁকা দেখে একটা কোণে গিয়ে হাজির হলুম।
Leave a Reply