আর্কাদি গাইদার
অষ্টম পরিচ্ছেদ
আমার লাল-হয়ে-ওঠা জলে-ভেজা মুখের দিকে তাকিয়ে ও বলল, ‘কি, তুষার- ঝড়?’
‘নয় তো কী,’ আমি জবাব দিলুম। ‘উহ, পায়ে যা লেগেছে। বাইরে একেবারে কালি-ঢালা অন্ধকার।’
তিষ্কা হাসল। কেন হাসল ও, বুঝলুম না। অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলুম। এবার আরও জোরে হেসে উঠল তিস্কা। ওর চোখের দৃষ্টি দেখে বুঝলুম আমাকে দেখে নয়, আমার পেছনে অন্য কিছু দেখে হাসছে ও। ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখি, পেছনে ফিয়োদর-কাকা আর আমার বাবা দাঁড়িয়ে।
সবাই মিলে যখন চা খেতে বসলুম তখন তিষ্কা বলল, ‘উনি তো আজ দু- দিন আমাদের সঙ্গে আছেন’।
‘দু-দি আমার বন্ধু?’ ন… আর তুই আমাকে এর আগে বলিস নি! এরপরও বলবি তুই অপরাধী-অপরাধী ভাব করে তিষ্কা প্রথমে ওর বাবার দিকে তারপর আমার বাবার দিকে চাইল। যেন ওঁদের কাছে ওর কাজের সমর্থন খুঁজছে।
ভারি ভারি হাত দিয়ে ছেলের পিঠ চাপড়ে চৌকিদার বললেন, ‘একেবারে যেন পাথর। দেখতে তেমন কেউ-কেটা না-হলে কী হবে, বেশ নির্ভর করার মতো খুদে মানুষ।’
বাবা পরে ছিলেন বেসামরিক পোশাক। তাঁকে বেশ খুশি-খুশি আর প্রাণবন্ত লাগছিল। আমাকে তিনি ইশকুলের ব্যাপার-স্যাপার জিজ্ঞেস করছিলেন আর হাসছিলেন কথায়-কথায়। বারবার বলছিলেন খালি:
‘কিছু, না.. কিছু না.. কিছু এসে-যায় না। চিন্তা কোরো না। দেখবে অখন কী দিন আসছে। কী? কিছু বুঝতে পারছ না?’
আমি বললুম আমার মনে হচ্ছে এরপর আরেক বার বকুনি খাওয়ার কারণ ঘটলেই আমাকে ইশকুল থেকে তাড়িয়ে দেবে।
‘তাতে চিন্তার কী আছে!’ ধাঁরভাবে বললেন বাবা। ‘যতক্ষণ তোমার শেখার ইচ্ছে আছে আর মাথাটা পরিষ্কার থাকছে ততক্ষণ ইশকুলে যাও আর না-যাও তুমি বোকা হয়ে থাকবে না।’
বললুম, ‘বাপি, আজ তুমি এত খুশি কেন গো, সব সময়েই হাসছ? আমাদের ইশকুলের পাদ্রিসাহেব কিন্তু তোমাকে নিয়ে একটা বক্তৃতা দিয়েছেন আর সবাই তোমার সম্বন্ধে এমনভাবে কথা বলছে যেন তুমি মরেই গেছ। আর এদিকে তুমি খুশিতে ডগমগ। ব্যাপার কী গো!’
Leave a Reply