শ্রী নিখিলনাথ রায়
তাহা নাগরী ও বাঙ্গলা উভয় অক্ষরে লিখিত হয়; পদ্মমোহন দাস নাগরীতে ও পুরুষোত্তম গুপ্ত বাঙ্গালায় লেখে। ইহাতেও অঙ্গীকার-পত্রের টাকা ও অন্যান্য হিসাবের উল্লেখ থাকে। কিন্তু অঙ্গীকার-পত্রানুযায়ী সমস্ত অর্থের সহিত কৃষ্ণজীবনের খাতায় লিখিত টাকার অনেক অমিল হয়। তৎকালে। অনেক হিসাবপত্র আর্কট-মুদ্রায় লিখিত হইত এবং এতদ্দেশের প্রচলিত টাকার সহিত উক্ত মুদ্রার কিঞ্চিৎ পার্থক্য, থাকায় বাটানুযায়ী সময়ে- সময়ে মূল্যেরও পার্থক্য হইত। সেই জন্য যে সময়ে হিসাব লিখিত হয়, খাতায় তাহার অনেক পরে সে হিসাব পুনলিখিত হওয়ায়, কিছু পার্থক্য হইবারই সম্ভাবনা।
এই M চিহ্নিত হিসাবের তালিকায় মোহন প্রসাদের সাক্ষর ছিল। আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, এই সমস্ত প্রমাণ সত্ত্বেও মহারাজ নন্দকুমার নিষ্কৃতি পাইলেন না! তাঁহাকে দোষী স্থির করিয়া জজ সাহেবেরা জুরীদিগকে চার্জ বুঝাইয়া দিলেন। আমরা পরে সে সমস্ত বিষয়ের উল্লেখ করিতেছি। প্রধান বিচারপতি জুরীদিগকে চার্জ বুঝাইয়া দেওয়ার পূর্ব্বে মহারাজের- কৌন্সিলি ফ্যারার সাহেব জুরীদিগকে লক্ষ্য করিয়া কিছু বলিতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন। ইংলণ্ডীয় আইনে গুরুতর অপরাধীদিগের কৌন্সিলি আইনসংক্রান্ত কোন কথা ব্যতীত আর কিছু বলিতে পারেন না বলিয়া তাঁহার আবেদন অগ্রাহ্য করা হয়।
কিন্তু জজ সাহেবেরা ইচ্ছা করিলে, স্বয়ং মহারাজ নন্দকুমারকে কিছু বলিবার জন্য আদেশ দিতে পারিতেন; তাঁহাকে সে সুযোগ প্রদান করাও হয় নাই। তাহার পর ইম্পে সাহেব জুরীদিগকে লক্ষ্য করিয়া বলিতে আরম্ভ করিলেন। তিনি মাহনপ্রসাদ, কমল উদ্দান, নবকৃষ্ণ প্রভৃতি ফরিয়াদীপক্ষের সাক্ষি- দিগের কথাগুলি বিশ্বাস করিবার জন্য, সে গুলিকে বিশদরূপ ব্যাখ্যা করেন। যদিও বিচারপতির নিয়মানুসারে সাক্ষিদিগের কথায় বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করিবার জন্য তিনি সমস্তই জুরীদিগের উপর নির্ভর করিয়াছিলেন, তথাপি তাঁহার বলিবার ভঙ্গিতে ফরিয়াদীপক্ষের সাক্ষীতে বিশ্বাস এবং আসামীপক্ষের সাক্ষীতে অবিশ্বাস করার কথা জুরীরা বুঝিয়া লইয়া ছিলেন।
অতঃপর জুরীরা প্রায় একঘণ্টা পরামর্শ করিয়া মহারাজ নন্দকুমারকে দোষী বলিয়াই প্রকাশ করিলেন। তজ্জন্ম তৎকালের নিয়মানুসারে ১৬ই জুন মহারাজ নন্দকুমারের প্রাণদণ্ডের আদেশ প্রদান করা হয়। প্রাণদণ্ডের আদেশ প্রদত্ত হইলে, মহারাজ নন্দকুমারকে কারাগারের আশ্রয় গ্রহণ করিতে হইল। কারাগারের একটি দ্বিতল গৃহ-তাঁহার আবাস- স্থানরূপে নির্দিষ্ট হইয়াছিল।
Leave a Reply