সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৩৪ অপরাহ্ন

কিভাবে পুনর্জীবনের ছোঁয়া লেগেছে চীনের গ্রামে

  • Update Time : শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৪.১৬ পিএম

ডিসেম্বর ৬, সিএমজি বাংলা ডেস্ক:  চীনের গ্রাম জীবনে এখন বইছে পুনর্জীবনের ধারা। গ্রামকে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুনভাবে। কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি হচ্ছে। সেইসঙ্গে উন্নয়ন হচ্ছে গ্রামীণ অবকাঠামোর। কৃষকের জীবনধারায় লেগেছে আধুনিকায়নের ছোঁয়া। তাদের আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে।

বিস্তীর্ণ ধান ক্ষেত। ফসলের মাঠে সোনালি ভবিষ্যতের ইশারা। সিছুয়ান প্রদেশের মেইশান সিটির ফসলের মাঠে কাজ করছে হারভেস্টার মেশিন।

হেইলংচিয়াং প্রদেশে হারভেস্টারমেশিনগুলো  সয়াবিনের ফসল সংগ্রহে ব্যস্ত। আরও চলছে ভুট্টার ফসল সংগ্রহের পালা।

চীনের গ্রামীণ পুনর্জীবনের ধারায় কৃষিক্ষেত্রে যেমন উন্নতি হয়েছে তেমনি উন্নয়ের সুবাতাস বইছে গ্রামীণ কৃষকের জীবনে। উন্নত হয়েছে তাদের লাইফস্টাইল। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো চীনের কৃষকের ফসলতোলা উৎসব।

উত্তর চীনের হেইলং চিয়াং প্রদেশ ২২ হাজার হেকটর জমিতে কাজ করছে ৫৩টি উচ্চশক্তির হারভেস্টার মেশিন। দক্ষিণ পশ্চিম চীনের হুয়াংহুয়াইহাই এলাকায় ভুট্টা তোলার পালা চলছে।

ইনার মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কৃষকরা আলুর ফসল তুলছেন।  হুনান প্রদেশের একজন কৃষক কাও চিয়ানহুয়া। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর চীনা কৃষকের ফসলতোলা উৎসবের সময় সিপিসির জেনারেল সেক্রেটারি সি চিনপিং আমাদের উৎসবের শুভেচ্ছা জানান যা আমাদের কাছে খুব ভালো লাগে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের দেশ কৃষিক্ষেত্রে অনেক গুরুত্ব দিয়েছে এবং বিনিয়োগ করেছে যেটা আমাদের অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। কৃষিকাজে আমরা আরও আশা ও আত্মবিশ্বাস অনুভব করছি।”

প্রেসিডেন্ট সি তার উৎসবের বার্তায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে আগামি গ্রীষ্মের ফলন যেন ভালো হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। আগে জন্মানো ধানের স্থিতিশীল উৎপাদন এবং সারা বছর ধরেই ফসলের বাম্পার ফলন নিশ্চিতে গুরুত্বারোপ করেছেন সি চিনপিং।

ফসলের উচ্চ ফলন নিশ্চিতের মাধ্যমে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় যা সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখে।

আনহুই প্রদেশের একজন কৃষক সু সোংছিয়াং বলেন, ‘ এই বছর হাজারের বেশি শস্য উৎপাদক দলগঠনের মাধ্যমে উন্নয়ন অর্জন করছে। ১৩ হাজার ৩৩৩ হেকটর উর্বর জমিতে বড় পরিসরে চাষ করা হচ্ছে। শস্য চাষীরা এ থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন এবং লাভবান হবেন। ’

সয়াবিনের চাষে বেশ লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা। কৃষিক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার উৎপাদন বাড়াচ্ছে।

লিউ চাওখাই এবজন  কৃষি প্রযুক্তিবিদ। তিনি বলেন, ‘এই বছর, আমরা পরীক্ষামূলকভাবে ৬০ ধরনের শস্যের চাষ করেছি। মূলত তিনটি ক্যাটাগরিতে ৪০ টি টেস্ট করেছি। ধরন, চাষের পদ্ধতি এবং সার প্রয়োগের অনুপাত নিয়ে পরীক্ষা করেছি  ৫০০ প্লট জমিতে। ’

কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত হয়েছে গ্রাম। বদলে গেছে গ্রামীণ জীবনধারা। শিশুরা উন্নত স্কুলে যাচ্ছে। খেলাধুলা করছে। প্রবীণরা নিশ্চিন্ত জীবন কাটাচ্ছেন। বিভিন্ন রকম বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আয়োজিত হচ্ছে।

গ্রামীণ পর্যটন বেড়েছে। বিভিন্ন খামার ও বাগানে পর্যটকরা আসায় আয় বেড়েছে কৃষকের।

শায়ানসি প্রদেশের একজন আঙুর চাষী ওয়াং সুইবিং। তিনি বলেন, ‘ আমি ১৩৩ হেকটর জমিতে পরিবেশবান্ধব আঙুরবাগান গড়েছি। এই বছর আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ আমাদের গ্রাম পর্যটন করেছেন। এর ফলে আমার আঙুরবাগানের আয় বেড়েছে।’

পদ্মবীজের মতো ঐতিহ্যবাহী খাদ্যসামগ্রীর চাষ চলছে। গ্রামে গ্রামে গ্রিন হাউজ, সোলার পদ্ধতি গড়ে উঠছে। আধুনিক চাষের পদ্ধতি অবলম্বন করায় কৃষকের জীবনে কায়িক শ্রমের কঠোরতা কমেছে। বেড়েছে সৃজনশীল কাজের ক্ষেত্র।

হ্যনান প্রদেশের খাইফ্যং সিটির কৃষি পেশাগত সমবায়ের প্রধান উ লোহাই বলেন, ‘আমরা নতুন যুগের চাষী। নতুন ধরনের কৃষি যন্ত্র ব্যবহার করি এবং বিভিন্ন রকম চাষ করি। এখন আমরা প্রতি মু পরিমাণ জমিতে ৩হাজার ৭৫০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত মিষ্টি আলু উৎপাদন করতে পারি। ভবিষ্যতে আরও বেশি শ্রম দিয়ে আরও উন্নতির জন্য তৈরি আছি।’

গ্রামীণ পুনর্জীবনের ধারায় চীনের গ্রামগুলো জেগে উঠেছে নতুনভাবে। সমৃদ্ধ হচ্ছে কৃষি, নিশ্চিত হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা। সুখের সুবাতাস বইছে কৃষকের জীবনে।

শান্তা মারিয়া

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024