নিজস্ব প্রতিনিধি
শহরের আদালত কক্ষে প্রতিষ্ঠিত ন্যায়বিচারকে সীমাবদ্ধ না রেখে তা সারা দেশের প্রতিটি কোণে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। শনিবার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘জুডিসিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যান্ড এফিসিয়েন্সি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ আহ্বান জানান। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাসহ বিচার সেবা প্রদানে দক্ষতা বৃদ্ধিতে করণীয় সম্পর্কে আয়োজিত এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, আমাদের সব প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে জনগণের সেবা করে এমন একটি বিচার বিভাগ তৈরি করার একক উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে। ন্যায়বিচার অবশ্যই একটি বড় শহরের আদালত কক্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটা দেশের প্রতিটি কোণে পৌঁছে দিতে হবে। এটি অর্জনের জন্য আমরা আইনি সহায়তা পরিষেবা প্রসার, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আর্থ-সামাজিক বাধা অতিক্রম করার মাধ্যমে সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ।
প্রধানবিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, আমি বিশ্বাস করি, জনকেন্দ্রিক বিচার বিভাগ এমন একটি ব্যবস্থা যা শুধু বিচারই করে না, অধিকারকেও প্রতিষ্ঠা করে। এটি নাগরিকদের অধিকার সম্পর্কে শিক্ষিত করে তোলে, তাদের গ্রহণযোগ্য পরিষেবা প্রদান করে এবং স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার মাধ্যমে বিশ্বাস গড়ে তোলে। আর এই দৃষ্টিভঙ্গিই আমাদের প্রতিদিন চালিত করে এবং এটিই ভবিষ্যতের বিচার ব্যবস্থাকে নির্ধারিত করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান বিচারপতি।
সেমিনারে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ, জেলা পর্যায়ের বিচারকগণ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রি, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন ও আইন কমিশনে নিযুক্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭১ সালের শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, যাদের আত্মত্যাগ আমাদের স্বাধীন জাতির ভিত্তিস্থাপন করেছিল। বিজয়ের এই মাস ডিসেম্বর, তাদের অতুলনীয় সাহস এবং উৎসর্গের একটি শক্তিশালী অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিপ্লবের দৃঢ় চেতনাকেও স্মরণ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, জুলাই বিপ্লব নিপীড়নকে উৎখাত এবং ন্যায়বিচার, সাম্য এবং মানবতা পুনরুদ্ধারের লড়াই।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের ইতিহাসের এই সংজ্ঞায়িত মুহূর্তগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ন্যায়বিচারের সন্ধান একটি ক্ষণস্থায়ী প্রচেষ্টা নয় বরং একটি আজীবন প্রতিশ্রুতি যা আমাদের বিচারিক মিশনের ভিত্তি তৈরি করে। প্রধান বিচারপতি বলেন, সম্প্রতি একজন বিচারপ্রার্থী আপিল বিভাগ বেঞ্চের কাছে যান। ওই বিচারপ্রার্থী কাঁপাকণ্ঠে কথা বললেন। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বিলম্বিত বিচারের কারণে ওই বিচারপ্রার্থী তার দুর্দশা কথা তুলে ধরেন। তার কষ্ট দেখে আমি তাকে আশ্বস্ত করেছিলাম যে আগামী মাসে তার মামলার শুনানি হবে। তার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে, বিচারে বিলম্ব হ্রাস করা নিছক প্রশাসনিক লক্ষ্য নয়, বরং এটি নৈতিক বাধ্যতামূলক।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অবশ্যই দক্ষতার পরিপূরক হতে হবে। আমরা কেস ব্যাকলগ, বিলম্ব এবং পদ্ধতিগত অদক্ষতা দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে গভীরভাবে সচেতন। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য একটি বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন, যা উদ্ভাবন, পরিশ্রম এবং দূরদর্শিতাকে একত্রিত করে। তিনি বলেন, কেস ম্যানেজমেন্ট প্রসেসকে স্ট্রিমলাইন করার জন্য কাজ করছি। আদালতের কার্যক্রমকে আরও দক্ষ ও স্বচ্ছ করতে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। ডিজিটালাইজেশন আর বিলাসিতা নয়; এটি একটি প্রয়োজনীয়তা। আধুনিক সরঞ্জাম? এবং প্রযুক্তিকে একীভূত করার মাধ্যমে, বিলম্ব কমাতে, স্বচ্ছতা বাড়াতে এবং মামলাকারীদের আরও নির্বিঘœ সেবা প্রদানে আমরা বদ্ধ পরিকর।
Leave a Reply