শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির সঠিক চিত্র উপস্থাপন

  • Update Time : বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮.০০ এএম

ফিকরি এ. রহমান এবং কারিসমা পুতেরা আবদ রহমান

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বে দেশের পররাষ্ট্রনীতি পশ্চিমের থেকে সরে এসে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে বলে সমালোচনা করা হয়েছে। এই পর্যবেক্ষণগুলো جز جزভাবে মালয়েশিয়ার BRICS (ব্রিকস) গোষ্ঠীতে যোগদানের ইচ্ছা, দক্ষিণ চীন সাগরের পরিস্থিতি নিয়ে তার অনাড়ম্বর মনোভাব এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের ওপর তার স্পষ্ট অবস্থানের কারণে উদ্ভূত হয়েছে।

এক সময় পশ্চিমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত আনোয়ার, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও চীনের দিকে সরে গেছেন, যা কিছু মানুষের ধারণা অনুযায়ী, মালয়েশিয়ার পশ্চিমের সাথে সম্পর্কের অবনতির ইঙ্গিত দেয়। তবে আনোয়ার একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিক, যার আন্তর্জাতিক নেতাদের সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং তিনি নিজের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে সচেতন।

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতি দীর্ঘ সময় ধরে সফল ছিল এবং আনোয়ার তার নেতৃত্বে সেই পুরনো নীতি বজায় রেখেছেন: অ-সংযুক্তি, বাস্তববাদী মনোভাব এবং স্বাধীনতা।

মালয়েশিয়ার কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করার সময় অনেক ভুল ধারণা তৈরি হয়, যেগুলো দ্বৈতবাদী, শূন্যসাম বা স্বল্পমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্ভূত। একটি দেশকে সাধারণত অথবা বিপদ মোকাবিলার জন্য ভারসাম্য রক্ষা করতে বা শত্রুদের সাথে মিলিত হতে হবে, এমন ধারণা থেকে এসব ভুল ধারণা তৈরি হয়।

চীন ও ফিলিস্তিন নিয়ে মালয়েশিয়ার অবস্থান পরিষ্কারভাবে দেশের আত্মবিশ্বাস এবং গঠনমূলক ভূরাজনৈতিক নীতির প্রমাণ। চীন এবং ফিলিস্তিনের বিষয়ে মালয়েশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি আংশিকভাবে অর্থনৈতিক এবং আংশিকভাবে ধর্মীয়।

মালয়েশিয়া যখন BRICS-এ যোগদান করার সিদ্ধান্ত নেয়, এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ ছিল, যা চীনের প্রভাব ছাড়াও বৈশ্বিক দক্ষিণের অন্যান্য শক্তির জন্য একটি বিকল্প হিসেবে কাজ করছে। এর সাথে সাথে মালয়েশিয়া CPTPP এবং অন্যান্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে যোগদান করেছে, যা তার কৌশলগত চিন্তা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের দিক থেকে তার অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে।

প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে, চীন এবং মালয়েশিয়ার সম্পর্ক শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, বরং সামরিক ও অবকাঠামোগত সম্পর্কেও গভীর। মালয়েশিয়া, চীনকে তার দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের অংশীদার হিসেবে মেনে চলেছে এবং এর সাথে তার বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অবকাঠামো প্রকল্পগুলির মধ্যে গভীর সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

মালয়েশিয়া, আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার অবস্থান স্থির রেখেছে এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছে, যা তার ইসলামিক নীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা, যেখানে তারা ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের প্রতিবাদ করেছে।

এছাড়া, মালয়েশিয়ার পশ্চিমের সাথে সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে, যেহেতু ২০২৩ সালে আমেরিকার সাথে তার বাণিজ্য ১১.৬% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং যৌথ সামরিক মহড়াও চালানো হচ্ছে।

এমনকি কিছু মালয়েশীয় সংস্থা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হলেও, মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক আইন এবং বিধিবিধান মেনে চলে এবং একে অপরের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে সামগ্রিকভাবে ইসলামী পরিচয় এবং পশ্চিমের সাথে সমঝোতা বজায় রাখে।

এটি প্রমাণিত যে, মালয়েশিয়া সবসময় একটি বাস্তববাদী নীতির অধিকারী, যা মধ্যবর্তী দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীর বড় শক্তির সাথে সমঝোতা রক্ষা করতে সক্ষম। মালয়েশিয়া, তার পররাষ্ট্রনীতিতে স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য এখন একটি স্পষ্ট বার্তা প্রেরণের দিকে লক্ষ্য রাখবে। এতে করে দেশটি নিজের বিদেশী সম্পর্কগুলির ব্যাপারে একক এবং দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। সরকারকে এর মাধ্যমে এই ধারণা পরিষ্কার করতে হবে যে, BRICS গোষ্ঠী শুধুমাত্র চীনের প্রভাব নয়, বরং বৈশ্বিক দক্ষিণের বাজারের সুযোগকে সম্প্রসারণ করছে।

এছাড়া, মালয়েশিয়া ASEAN+3 এর মতো এশিয়ার অন্যান্য গোষ্ঠীগুলির সাথে তাদের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে চাইবে। এই পারস্পরিক সহযোগিতাগুলির মাধ্যমে মালয়েশিয়া তার বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের সম্পর্ক চীন ছাড়াও অন্যান্য দেশগুলির সাথে বিস্তৃত করবে, যেমন রাশিয়া ও ভারত।

এমনকি, মালয়েশিয়া তার পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে যে সমস্ত ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলিকে দূর করতে হবে। দেশটির উচিত একযোগে একটি কৌশলগত এবং একীভূত ধারাবাহিকতা তৈরি করা, যাতে তার বিদেশী সম্পর্কগুলি আরও কার্যকর এবং সমন্বিত হয়।

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের মানুষের এবং জাতির স্বার্থ রক্ষা করা, তবে বাস্তববাদী দৃষ্টিকোণ থেকে পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা অপরিহার্য। পশ্চিমে নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে মালয়েশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।

মালয়েশিয়া পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে যত সমালোচনা ও বিতর্কই থাকুক না কেন, তার দীর্ঘমেয়াদী কৌশল ও সুপরিকল্পিত পদক্ষেপগুলি তার নীতির শক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের পরিচয় বহন করে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024