মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:৫৫ অপরাহ্ন

রোমাঞ্চকর সময় (পর্ব -০২)

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮.০০ পিএম

আর্কাদি গাইদার

প্রথম পরিচ্ছেদ

কোথেকে লাল ফিতে যোগাড় ছুটোছ,টি করে নিজের উচু ক্লাসের ছেলেরা দেখিয়ে-দেখিয়ে তাদের উচু বুটের হধ্যে রাউজামের তলাটা গজে নিল (আগে ইশকুলে এটা নিষিদ্ধ ছিল), আর পেচ্ছাপখানার বাইরে জড়ো হয়ে ক্লাসের মাস্টারমশাইদের চোখের সামনেই দেখিয়ে- দেখিয়ে সিগারেট টানতে শুরু করল। আমাদের ড্রিলের টিচার সামরিক অফিসার বালাগুশিন ওদের দিকে এগিয়ে যেতেই তাঁর দিকেও ওরা সিগারেট বাড়িয়ে দিল আর তিনি বেমালুম সেটা নিলেন। ইশকুল কর্তৃপক্ষ আর ছাত্রদের মধ্যে অভূতপূর্ব মিলনের এই দৃশ্য দেখে জোর একটা জয়ধ্বনি উঠল।

এই সমস্ত কাণ্ডকারখানা থেকে ওই সময়ে ছাত্ররা যেটুকু খবর সংগ্রহ করতে পারল তা এই যে জারকে গদিচ্যুত করা হয়েছে আর বিপ্লব শুরু হচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ ছেলেই, বিশেষ করে নিচের ক্লাসের ছেলেরা, বুঝতে পারল না বিপ্লব হলে আনন্দ করার কী আছে, আর যে-জারের ছবির সামনে ক-দিন আগেও ইশকুলের গায়কদল একান্ত আগ্রহে জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছিল তাঁকে সিংহাসন থেকে তাড়িয়ে দিয়েই-বা লাভটা কী হল।

প্রথম কয়েক দিন বলতে গেলে কোনো ক্লাসই হল না। উঁচু ক্লাসের ছেলেরা যোগ দিল স্থানীয় রক্ষীবাহিনীতে। রাইফেল কাঁধে নিয়ে হাতোল কাপড়ের পাট্টি বোধে তারা শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার ভার নিয়ে গর্বের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে লাগল। অবিশ্যি এমনিতেই শান্তি-শৃঙ্খলা ভাঙার কথা কারো মাথায় আসে নি। শহরের তিরিশটা গির্জের ঘণ্টাই খ্যীস্টের শেষ ভোজন-সংক্রান্ত বাজনাটা বাজাতে লাগল। পাদ্রিরা সব উজ্জলরঙের আঙরাখা পরে যজমানদের অস্থায়ী সরকারের প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করাতে লাগলেন।

রাস্তাঘাটে লাল রঙের শার্ট-পরা লোক দেখা যেতে লাগল। পাদ্রি ইয়োনার ছেলে উচ্চশিক্ষার্থী আখান্‌গেস্কি, গাঁয়ের ইশকুলের দুজন শিক্ষক আর আমার অচেনা আরও তিন জন লোক নিজেদের সোশ্যালিস্ট-রেভোলিউশনারি, বা সংক্ষেপে ‘এস- আর’ বলে নিজেদের পরিচয় দিতে লাগল। কালো কুর্তা-পরা লোকও দেখা গেল, এরা বেশির ভাগই ছিল শিক্ষক-প্রশিক্ষণ ও ঈশ্বরতত্ত্ব-শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলির ছাত্র। নিজেদের এরা পরিচয় দিচ্ছিল নৈরাজ্যবাদী বলে।

শহরের বেশির ভাগ লোকই প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ‘এস-আর’-দের দলে যোগ দিল। এ-ব্যাপারে রেভারেন্ড পাভেলের কৃতিত্ব বড় কম ছিল না। কারণ, বড় গির্জোয় অস্থায়ী সরকারের স্থায়িত্বকাল দীর্ঘ করার জন্যে আয়োজিত প্রার্থনান্তিক ভাষণে তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে যিশু খ্রীস্ট স্বয়ং ছিলেন সমাজতন্ত্রী আর বিপ্লবী। আর আমাদের শহরের বাসিন্দারা, যারা বেশির ভাগই ছিল মহাজন-ব্যবসাদার, কারিগর, সন্ন্যাসী আর তীর্থযাত্রী, অর্থাৎ ধর্মভীর লোক, যিশু খ্রীস্টের চরিত্রের এই নতুন দিকের সন্ধান পেয়ে তারা ‘এস-আর’-দের দিকে তাড়াতাড়ি ঝাঁকে পড়ল।

বিশেষ করে ধর্ম সম্বন্ধে ‘এস-আর’-দের তেমন কিছু বক্তব্য না থাকায়, আর তারা প্রধানত স্বাধীনতার কথা আর দ্বিগুণ শক্তিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলায় তাদের প্রতি অনেকের সহানুভূতি উথলে উঠল। নৈরাজ্যবাদীরা যুদ্ধ সম্বন্ধে একই কথা বললেও ঈশ্বরকে গালমন্দ করত। যেমন, ধর্মীয় উচ্চশিক্ষার্থী ভেলিকানভ বক্তৃতামণ্ড থেকে সোজাসুজি ঘোষণা করে বসল যে ঈশ্বর নেই। আর যদিই-বা ঈশ্বর থেকে থাকেন তাহলে তিনি তার, অর্থাৎ ভেলিকানভের, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সকলের সামনে তাঁর ক্ষমতার পরিচয় দিন।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024