সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:৩২ অপরাহ্ন

রোমাঞ্চকর সময় (পর্ব -০৪)

  • Update Time : শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮.০০ পিএম

আর্কাদি গাইদার

প্রথম পরিচ্ছেদ

শুনে ভালো মানুষের মতো হাসতে লাগল এভূগ্রাফ তিমোফেয়েভিচ। সঙ্গে সঙ্গে বোতলের কানায়-কানায় ভরা তেলটাও দুলতে লাগল।

‘আগেও আইন ছিল, এখনও আইন থাকবে। আইন ছাড়া চলা যায় না, বুইলে ছোকরা। আর, কি কইলে, আমাদের বিচার? তা হোক না বিচার। ফাঁসি যাব না তো আর। আমাদের বড়কত্তাদেরও ফাঁসি হচ্ছে না। স্বয়ং জারকেই ওরা বাড়িতে অন্তরীণ করে রেখেছে, তা আমাদের আর কী হবে! শোনো হে, বক্তা কী বলচে। বলচে, শোধ-নেয়ানেয়ি থাকবে না, সব লোক হবে ভাই-ভাই। আর এমন মুক্ত রুশিয়ায় না-থাকবে জেল, না-থাকবে ফাঁসি। তার মানে, আমাদেরও জেল হবে না, ফাঁসিও হবে না।’

বলে ধীরে-সুস্থে চলে গেল লোকটা।

ওর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে ভাবলুম: ‘এ কী করে হতে পারে? এর মানে ও কি বলতে চায় যে আজ বাবা যদি জেলে থাকতেন আর জেলে থেকে খালাস পেতেন তাহলে তিনি তাঁর জেলের কত্তাকে ধীরে-সুস্থে ঘুরে বেড়াতে দিতেন, তার একগাছা চুলও ছাতেন না? আর তা এই কারণে যে সব মানুষকে ভাই-ভাই ভাবতে হবে?’

ফেদ্কাকেও জিজ্ঞেস করলুম কথাটা।

ও বলল, ‘এর সঙ্গে তোর বাবার সম্বন্ধ কী। তোর বাবা ছিলেন ফৌজ থেকে ফেরারী। তাঁর নামে একটা কলঙ্কের দাগ পড়ে গেছে। পলাতকদের এখনও তাড়া করে ধরা হচ্ছে। পলাতক তো আর বিপ্লবী নয়। দেশের জন্যে লড়তে চায় না বলে সে সরে পড়েছে, এই মাত্র।’

ফ্যাকাশে হয়ে গিয়ে বললুম, ‘আমার বাবা মোটেই ভীরু ছিলেন না। তুই অমন মেজাজে কথা বলছিস কেন? তাছাড়া আমার বাবাকে গুলি করা হয়েছিল শুধু ফৌজ থেকে পালানোর জন্যে নয়, বিপ্লবী প্রচারের জন্যেও। প্রাণদণ্ডাজ্ঞার একটা নকল আমাদের বাড়িতে আছে, জানিস তো।’

ফেক্কা যেন নিভে গেল। মিটমাট করে নেয়ার সুরে বললে:

‘তুই কি ভাবলি আমি এটা নিজের কথা বলছি? সব কটা খবরের কাগজে এ নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে না? ‘রুস্কোয়ে স্লোভো’তে কেরে নিষ্কর বক্তৃতাটা পড়ে দ্যাখ। চমৎকার বলেছেন। বালিকা-বিদ্যালয়ে একটা সভায় ওটা যখন পড়ে শোনানো হল তখন হলের অর্ধেক লোক কাঁদতে শুরু করল। ওতে যুদ্ধের কথাও বলা হয়েছে। কীভাবে যুদ্ধে আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে, পলাতকরা-যে সেনাবাহিনীর কলঙ্ক, এই সব কথা। আরও বলা হয়েছে, ‘জার্মানদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যাঁরা মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁদের সমাধির উপর মুক্ত রাশিয়া অক্ষয় মহিমার এক কীর্তিস্তম্ভ স্থাপন করবে’। বুঝলি, ‘অক্ষয় মহিমা!’ আর তবু তুই কিনা তর্ক করিস!’

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024