আর্কাদি গাইদার
প্রথম পরিচ্ছেদ
দাঁড়কাকের হাত দু-খানা লম্বা আর লিকলিকে। চা তৈরি করতে করতে অনবরত হড়হড় করে কথা বলতে থাকলেন উনি। আর মাঝে মাঝে হাসতে লাগলেন।
‘তোমার বাবা বস্তু তাড়াতাড়ি মারা গেলেন। সামরিক আদালতে বিচারের জন্যে ওঁকে নিয়ে যাবার আগে উনি আর আমি একই কামরায় কয়েদ ছিলুম।’
চা খেতে-খেতে আমি বললুম, ‘সেমিওন ইভানোভিচ, আপনি বলছেন আপনি আর বাপি একই পার্টি’র কমরেড ছিলেন। কিন্তু বাপি কি পার্টিতে ছিল না কি?
কই, আমায় তো বাপি এ-সম্বন্ধে কখনও কিছু বলে নি।’
‘তিনি বলেন নি, কারণ তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব ছিল না।’
‘আপনিও তো আগে একথা বলেন নি। আপনাকে যখন পুলিস গ্রেপ্তার করল পেতৃকা জোলোতুখিন তখন বলেছিল আপনি নাকি গুপ্তচর ছিলেন।’
দাঁড়কাক হাসলেন।
‘গুপ্তচর? হা-হা-হা। পেতৃকা জোলোতুখিন বলেছে? হা-হা। নাঃ, পেত্কা জোলোতুখিন বলেই কথাটা ক্ষমা করা যায়। ছেলেটা নেহাতই হাঁদারাম। কিন্তু এখন যখন ধাড়ি ধাড়ি হাঁদারা আমাদের গুপ্তচর বলে গুজব ছড়াচ্ছে তখন আরও বেশি মজা পাচ্ছি, বুঝলে ইয়ার।’
‘ওরা কাদের সম্বন্ধে গুজব রটাচ্ছে, সেমিওন ইভানোভিচ?’
‘আমাদের সম্বন্ধে। বলশেভিকদের সম্বন্ধে।’
কথাটা শুনে আমি ওঁর দিকে বাঁকা চোখে তাকালুম।
‘আপনারা তাহলে বলশেভিক মানে, বাবাও বলশেভিক ছিল?’
‘হ্যাঁ, তা ছিলেন।’
এক মুহূর্ত’ কী ভেবে দুঃখিতভাবে বললুম:
‘আচ্ছা, বাবার বেলায় সব গোলমাল হয়ে গেল কেন? অন্যদের মতো তো হল ना?’
‘তার মানে?’
‘মানে, অন্যেরা যখন সৈনিক হয় তখন সৈনিকই হয়। আবার যখন বিপ্লবী হয় তখন খাঁটি বিপ্লবীই হয়। তখন তাদের সম্বন্ধে কেউ কোনো মন্দ কথা বলতে পারে না। সকলেই তাদের শ্রদ্ধা করে। কিন্তু আমার বাবা না। কখনও শুনি তিনি পলাতক, আবার কখনও তিনি যে কী, ঠিক বুঝলুম শুনি তিনি নাকি বলশেভিক।
Leave a Reply