প্রদীপ কুমার মজুমদার
ভারতীয় বর্ণমালা উদ্ভূত হয় নি। ফিনিসীয় বর্ণমালার একটি বিভাগ সেবীয় বর্ণমালা হতে ইহা উদ্ভূত। যাই হোক আমরা লক্ষ্য করেছি ভারতীয় বর্ণমালা কোথা থেকে উদ্ভূত পণ্ডিতেরা সে সম্পর্কে কোন সুনিশ্চিত সিদ্ধান্ত উপনীত হ’তে পারেন নি। তবে যে যাই সিদ্ধান্তে পৌঁছান না কেন, ভারতীয় বর্ণমালা যে প্রাচীন সে সম্পর্কে কোন বিতর্কের অবকাশ নেই। আমাদের শাস্ত্র বশেষ করে বেদ, পুরাণ প্রভৃতিতে এ সম্পর্কে ঝুড়ি ঝুড়ি উদাহরণ আছে। যেমন ঋগ্বেদে দশম মণ্ডলের ৪র্থ ঋকে বলা হয়েছে-
উতত্বঃ পশ্যন্ন দদর্শ বাচমুত ত্ব শূন্ন শূণোত্যেনাম্।
উতো ত্বম্মৈ তন্বঃ বি সহস্র জায়েব পত্য উশতী সুবাসাঃ।
অর্থাৎ “কেহ কেহ কথা দেখিয়াও ভাবার্থ গ্রহণ করিতে পারে না, কেহ শুনিয়াও শুনেনা। যেমন গ্রেম পরিপূর্ণা সুন্দর পরিচ্ছদ-ধারিণী ভার্যা আপন স্বামীর নিকট দেহ প্রকাশ করেন, তদ্রূপ বান্দেবী কোনও কোনও ব্যক্তির নিকট প্রকাশিত হন।”
সুতরাং এই শ্লোক থেকে এটুকু স্পষ্ট বোঝা যায় যে ঋগ্বেদের সময় লিখিত ভাষার অস্তিত্ব ছিল।কৌষীতকী ব্রাহ্মণের কোন একটি উক্তিতে বোঝা যায় ঐ সময় ভাষা এবং বর্ণমালা ছিল।
যাজ্ঞবন্ধ্য সংহিতার প্রথম অধ্যায়ের ৩১৮-৩২০ শ্লোকগুলিতে তৎকালীন যে বর্ণমালা অর্থাৎ লেখার প্রচলন ছিল তা বোঝা যায়। এখানে বলা হয়েছে-
দখ্যাভূমিং নিবন্ধং বা কৃত্বা লেখক কারয়েৎ।
আগামিভদ্রনৃপতিপরিজ্ঞানায় পার্থিবঃ। ৩১৮ পটে বা তাম্রপট্টে বা স্বমুদ্রোপরিচিহ্নিতম্।
অভিলেখ্যাত্মনোবংশানাত্মানফ মহীপতিঃ । ৩১৯
প্রতিগ্রহপরীমাণং দানাচ্ছেদোপবর্ণনম্।
স্বহস্তকালসম্পন্নং শাসনং কারয়েৎ স্থিরম্ ॥ ৩২০
অর্থাৎ রাজা ভূমিদান বা নিবন্ধ করিলে ভাবী সাধু রাজার পরিজ্ঞানার্থ লেখ্য করাইবেন। রাজা কার্পাসাদি পটে বা তাম্রফলকে নিজ বংশ, পিত্রাদি পুরুষত্রয়ের, আপনার ও প্রতিগৃহিতীর নাম, প্রতিগ্রহের পরিমাণ, এবং গ্রাম ক্ষেত্রাদি প্রদত্ত ভূমির চতুঃসীমা ও পরিমাণ নিদ্দেশ, এই সকল বিষয় লিখিবেন, উক্ত পত্রে আপন হস্তাক্ষর থাকিবে। কালের উল্লেখ থাকিবে, এবং উহা নিজ মুদ্রায় চিহ্নিত করিয়া দৃঢ় করিয়। দিবেন।
অতএব যাজ্ঞবন্ধ্য সংহিতার সময় বর্ণমালা নিশ্চয়ই ছিল নতুবা লেখার কথা কেন উল্লেখ থাকবে।
(চলবে)
Leave a Reply