শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন

বাবা শিবানন্দ

  • Update Time : শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮.০০ এএম
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান
স্বামী শিবানন্দ যিনি সবার কাছে শিবানন্দ বাবা নামে পরিচিত, তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রবীণ যোগী সন্ন্যাসী হিসেবে পরিচিত। জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট অনুসারে তার জন্ম তারিখ ৮ আগস্ট ১৮৯৬। সে হিসাবে তা’র বর্তমান বয়স ১২৮ বছর। পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্থ ও কর্মক্ষম প্রবীণতম ব্যক্তি হিসেবেও তা কে বিবেচনা করা হয়।
প্রথম জীবনে তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবি বা ব্যাচেলর ইন মেডিসিন ডিগ্রি লাভ করেন যা বর্তমানে এমবিবিএস ডিগ্রি নামে পরিচিতি। তিনি একজন চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯২৫ সালে ইংল্যান্ডে সাইকোলজির ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
স্বামী শিবানন্দের জন্ম অবিভক্ত বাংলায়। বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার হরিতলা গ্রামে ১২৮ বছর আগে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শ্রীনাথ গোস্বামী এবং মা ভগবতী দেবী। মাত্র ছয় বছর বয়সের মধ্যেই তিনি তার বাবা, মা এবং বড় বোনকে হারান। এই চরম সময়ে তার জীবনের ভরসাস্থল হয়ে ওঠেন তার আত্মিক গুরু এবং বিখ্যাত সন্ন্যাসী স্বামী ওঙ্কারানন্দ। নবদ্বীপে গুরুগৃহে তিনি টানা বসবাস শুরু করেন ১৯০১ সাল থেকে। সেই ছোটবেলা তার গুরুর কাছ থেকেই জীবন সম্পর্কে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, যোগ সাধনা এবং সহজ জীবন যাপনের দীক্ষা স্বামী শিবানন্দ পেয়েছেন। আত্মিক গুরুর প্রতিটি নির্দেশনায় অবিচল থাকা এবং তা যথাযথ ভাবে মেনে চলেই তিনি এই অসাধারণ জীবন যাপনের মূলমন্ত্র খুঁজে পেয়েছেন।
স্বামী শিবানন্দ ইতিহাসের বহু ঘটনার স্বাক্ষী। বাংলার দুই কৃতী সন্তান নেতাজি সুভাসচন্দ্র বসু এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চেয়েও তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ! বয়সের হিসাবে নেতাজি তার এক বছরের এবং বিদ্রোহী কবি তিন বছরের ছোট। রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লব, দুটো বিশ্বযুদ্ধসহ পৃথিবীর অনেক ঘটনাই তার জীবিত অবস্থায় ঘটেছে। তিনি যখন জন্মেছেন তখন পৃথিবীতে মোট ৭৮টি দেশ ছিল। বর্তমানে জাতিসংঘের স্বীকৃত দেশের সংখ্যা ১৯৫। অর্থাৎ স্বামী শিবানন্দের জন্মের পর পৃথিবীতে ১১৭ টি দেশের জন্ম হয়েছো ১২৮ বছর বয়সেও স্বামী শিবানন্দ সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। তিনি নিজেকে সবসময় ‘ফিজিকালি ফিট, মেন্টালি অ্যালার্ট অর্থাৎ শারীরিক ভাবে সুস্থ ও মানসিক ভাবে সতর্ক মনে করেন। তার শারীরিক সক্ষমতা চিকিৎসকদের কাছেও এক বিরাট বিস্ময়। অনেক চিকিৎসক বর্ণনা করেছেন তিনি এতো বেশি ব্যতিক্রম যে তাকে মেডিক্যাল সায়েন্সের কোনো সূত্রে ফেলা সম্ভব নয়।
চিরকুমার স্বামী শিবানন্দের মানবসেবাই ব্রত। তার দিন শুরু হয় মধ্যরাত তিনটায়। প্রতিবার ঘুম থেকে ওঠে স্রষ্ঠার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, যোগ ব্যায়াম ও মন্ত্রযপ করা তার নিয়মিত অভ্যাস। তিনি স্বল্পহারী। সব সময়ই তেলমুক্ত খাবার খান। নিয়মিত চোখের ব্যায়াম করেন। তিনি এখনো চশমা ব্যবহার করেন না। খাবারের বিষয়ে তিনি বলে থাকেন, ‘ইট দি লিকুয়িড, ড্রিংক দি সলিড’। অর্থাৎ তিনি পানিসহ তরল খাবার শক্ত খাবারের মতো চিবিয়ে এবং শক্ত খাবারকে মুখে একেবারেই নরম করে তরলের মতো গিলে ফেলেন।
ভারতের বারাণসী যা বাংলার মানুষের কাছে কাশী নামে বেশি পরিচিতি, সেখানেই তিনি বসবাস করছেন। সম্মানিত সুধী, আপনাদের জেনে ভালো লাগবে যে জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে তার এক ভক্তের দেয়া ফ্ল্যাট তিনি ছেড়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া পূণ্যার্থীদের জন্য। সেখানে এক মাস তারা বিনাখরচে থাকা-খাওয়ার সুযোগ পান।
যোগব্যায়ামের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য স্বামী শিবানন্দ ২০২২ সালের মার্চ মাসে ভারত সরকার কর্তৃক দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯২৫ সাল থেকে স্বামী শিবানন্দ বিদেশ ভ্রমণ শুরু করেন। তিনি ইংল্যান্ড, গ্রিস, ফ্রান্স, স্পেন, অস্ট্রিয়া, ইতালি, হাঙ্গেরি, রাশিয়া, পোল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, বুলগেরিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ অর্ধশতাধিক দেশ সফর করেন। টানা ৩৪ বছর তিনি বিদেশে ঘুরেছেন। ১৯৫৯ সালে গুরুর নির্দেশে কাশীধামে ফিরে সাধনজগতে ডুব দেন তিনি।
একজন মানুষের সার্বিক সুস্থতার জন্য শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক এই চারটি বিষয়কে সামনে রেখে টোটাল ফিটনেসের সার্থক ও আদর্শ উদাহরণ স্বামী শিবানন্দ।
লেখক পরিচিতি: সাংবাদিক ও গবেষক

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024