ম্যাকসিম গোর্কী
চৌত্রিশ
সম্ভবত বিশ্বাস করতে পারেও না। তখন সে ভাবে যে সে ওটাকে স্বপ্নে দেখেছে এবং বানায় নি। একজন বুড়ো জমিদার একটি গল্প বলেছিলেন। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন যে তিনি একটা বনে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে এক সময় বন থেকে বেরিয়ে এসে পৌঁছলেন একটা মালভূমিতে। ওই মালভূমির উপর তিনি দেখলেন ছটি পাহাড়। পাহাড় দুটি অকস্মাৎ মেয়ে মানুষের দুটি স্তনে পরিণত হ’লো।
এবং সেই স্তন দুটোর মাঝখানে জেগে উঠলো কালো একটা মুখ: মুখখানার চোখ নেই, আছে চোখ দুটোর জায়গায় দুটো চাঁদের মতো শাদা দুটো দাগ। বুড়ো স্বপ্নে দেখলেন, তিনি মেয়েটির ছ’টো পায়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন, এবং তাঁর সম্মুখে একটা গভীর কালো গুহা। গুহাটা যেন তাঁকে টেনে গ্রাস করে নিলো। এই স্বপ্নের পর তাঁর চুল গেলো পেকে, হাত কাঁপতে লাগলো।
জল-চিকিৎসা করবার জন্যে তিনি বিদেশে ডক্টর ক্লাইপের কাছে গেলেন। কিন্তু, বাস্তবিক পক্ষে, তিনি ওই ধরণের কিছু দেখে থাকবেন-কারণ, তিনি ছিলেন অসচ্চরিত্র।”
তারপর তিনি আমার কাঁধে সস্নেহে মৃদু আঘাত ক’রে বললেন:
“কিন্তু তুমি তো মাতালও নও, অসচ্চরিত্র-ও নও। তবু এ স্বপ্ন তুমি কেমন ক’রে দেখলে?”
“জানি না।”
“আমরা আমাদের নিজেদের সম্বন্ধে কিছুই জানি না।”
তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, চোখ দুটোকে পাকিয়ে উপরের দিকে তুললেন, সামান্য চিন্তা করলেন, তারপর নতকণ্ঠে আবার বললেন:
“আমরা কিছুই জানি না।” ঐ দিন সন্ধ্যায় বেড়াবার সময় আমার একখানি হাত তিনি নিজের হাত দিয়ে জড়িয়ে বললেন:
“শূন্য বুট দু’টো অভিযান করছে,-কী ভয়ংকর, তাই না? সম্পূর্ণ খালি এক জোড়া বুট-খট্ খট্ শব্দ-আর মচ মচ ক’রে ভাঙছে বরফগুলো। সুন্দর। কিন্তু তুমি বড়ো কেতাবী, অত্যন্ত কেতাবী। রাগ কোরো না। এ খারাপ, কারণ এ তোমার অন্তরায় হবে।”
তাঁর চেয়ে অধিক কেতাবী আমি কখনো নই। ঐ সময় তাঁর খোস কথাবার্তা সত্ত্বেও তাঁকে নিষ্ঠুর যুক্তিবাদী ব’লেই আমার মনে হল।
Leave a Reply