শ্রী নিখিলনাথ রায়
সমস্ত কলি- কাতায় মহান্দোলন পড়িয়া গেল, অনেকে কলিকাতা পরিত্যাগ করিয়া ৰালি প্রভৃতি স্থানে আবাসস্থান স্থাপন করিল। সমস্ত বঙ্গরাজ্যের লোকেরা মহারাজের অন্যায় প্রাণদণ্ডে মর্মাহত হইল, সর্ব্বাপেক্ষা ঢাকার লোকেরা বিশেষরূপে দুঃখ প্রকাশ করিয়াছিল।। যে দৃশ্যে একজন ইংরেজসন্তানও অভিভূত হইয়া, শিবিকামধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করিতে বাধ্য হন, সেই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখিয়া ও তাহার মর্ম্মস্পশিনী কাহিনী শুনিয়া, সমস্ত বঙ্গবাসী যে বিচলিত হইবে, তাহাতে আর বিস্ময় কি? হায় মাতঃ
বঙ্গভূমি, সে সময়ে তুমি রসাতলগামিনী হইলে না কেন? হায় মাতঃ ভাগীরথি, সে সময়ে সমস্ত বঙ্গভূমি তোমার জলপ্লাবনে আচ্ছাদিত হইল না কেন? এই রূপে বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের দেহপাতে কোম্পানীর রাজ্য বঙ্গদেশে সুদৃঢ় হইল। বৈষ্ণবচূড়ামণি ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ নিজ জীবন বলি দিয়া, কোম্পানীর শাসনকর্তার প্রতিহিংসার নিবৃত্তি করিলেন! আর কতকগুলি কুলাঙ্গার বঙ্গবাসী তাহাতে যোগ দিয়া, আপনাদের স্বার্থসিদ্ধির পথ পরিষ্কার করিল! হা ধৰ্ম্ম! তুমি যে অনেক দিন বঙ্গভূমি হইতে বিদায় লইয়াছ, তাহা কেমন করিয়া জানিব!
দেশের মঙ্গল করিতে গিয়া মহারাজ নন্দকুমার কিরূপে জীবন বলি দিতে বাধ্য হইয়াছিলেন, আমরা সংক্ষেপে তাহার মর্ম্ম প্রদান করিলাম। হেষ্টিংসের কূটচক্রে ইম্পের অন্যায্য ও পক্ষপাতপরিপূর্ণ বিচারে তাঁহাকে যে জীবন বিসর্জন দিতে হইয়াছিল ইহাও সাধারণে হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিয়াছেন। যদিও ইংলণ্ডীয় আইনে জালিয়াত আসামীর প্রাণদণ্ডের আদেশ তৎকালে প্রচলিত হইয়াছিল এবং কলিকাতার অধিবাসিগণ সেই আইনের দ্বারা দণ্ডাহ হইতে পারিত, তথাপি কলিকাতার অধিবাসীরা সে বিষয়ে যে অনেক পরিমাণে অনভিজ্ঞ ছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই।
সুপ্রীম কোর্টের স্থাপনা অবধি কলিকাতায় ইংলণ্ডীয় আইনের প্রচলন বিশেষ- রূপে আরব্ধ হয়। তৎকালে ভারতবর্ষীয় আইনে জালিয়াতের প্রাণদণ্ডেরা ব্যবস্থা ছিল না। ইহার পূর্ব্বে কলিকাতায় দুই এক জন জালিয়াত অপ- রাধীর প্রাণদণ্ড রহিতও হইয়াছিল। জজেরা ইচ্ছা করিলে, নন্দকুমারের অপরাধ যথার্থ হইলেও তাঁহাকে প্রাণদণ্ড হইতে অব্যাহতি দিতেও পারি- তেন। কলিকাতায় ইংলণ্ডীয় আইন প্রচলিত হইলেও কলিকাতার অবস্থ যে তাৎকালিক ইংলণ্ডের ন্যায় ছিল না, ইহাও তাঁহাদের বিবেচনা করা উচিত ছিল এবং নন্দকুমারকে ব্রাহ্মণ বলিয়া তাঁহারা অব্যাহতি দিতে পারি- তেন।
Leave a Reply