শ্রী নিখিলনাথ রায়
কিন্তু হেষ্টিংসের অনুরোধ অব্যর্থ। যিনি প্রভুভক্তি ও স্বদেশের হিতসাধনের জন্য আপনার জীবনকে উৎসর্গীকৃত করিয়াছিলেন, তাঁহার পুরস্কার জীবনদণ্ড বাতীত আর কি হইতে পারে! যে দেশের জন্য তিনি শত বিপদ মাথায় লইয়াছিলেন, সে দেশের লোকের মধ্যে কেহ কেহ তাঁহার পাণদণ্ডে সন্তোষলাভ পর্য্যন্তও করিয়াছিল। এ যে বঙ্গভূমি, এখানে সমস্তই শোভা পায়! অন্য কোন দেশ হইলে, এরূপ পরোপকারী লোকের মৃত্যুতে দেশমধ্যে যে মহা আন্দোলন উপস্থিত হইত, তাহাতে কাহারও সন্দেহ থাকিতে পারে না।
যদিও মহারাজ নন্দকুমাবের মৃত্যুতে সমস্ত বঙ্গভূমি শোকাভিভূত হইয়াছিল সত্য, তথাপি তাহা বাঙ্গালীর উপযোগী শোকপ্রকাশ ব্যতীত আর কিছুই নহে। বাঙ্গালী কাঁদিয়াই আকুল হয়; কিন্তু রোদনের কারণ দূর করিতে কোন কালে তাহাদিগকে তৎপর দেখিতে পাওয়া যায় না। মহারাজের হত্যাকাণ্ড লইয়া পরে ইংলণ্ডেও গুরুতর আন্দোলন উপস্থিত হইয়াছিল এবং হেষ্টিংস ও -ইম্পের জন্য বিচারও ঘটিয়াছিল।
আমরা মহারাজ নন্দকুমারের রাজনৈতিক চরিত্রসম্বন্ধে আর অধিক বলিতে ইচ্ছা করি না। কারণ আমাদের প্রবন্ধ অত্যন্ত দীর্ঘ হইয়া উঠিয়াছে। অতঃপর তাঁহার সামাজিক চরিত্র সম্বন্ধে দুই চারিটি কথা বলিয়া আমরা প্রবন্ধের উপসংহার করিতেছি। আমরা বরাবরই বলিয়া আসিয়াছি যে, মহারাজ একজন নিষ্ঠাবান্ হিন্দু ছিলেন এবং প্রকৃত ব্রাহ্মণের ন্যায় তিনি আপনার ধর্ম্মকার্য্য প্রতিপালন করিতে চেষ্টা পাইতেন। তিনি একজন পরমবৈষ্ণব ছিলেন; কিন্তু সাম্প্রদায়িক বৈষ্ণবগণের ন্যায় অনুদার ছিলেন না। সকল দেবতা ও সকল সম্প্রদায়কে তিনি আন্তরিক শ্রদ্ধা করিতেন।
বৈষ্ণব হইয়া গুহ্যকালী গৌরীশঙ্কর প্রভৃতি প্রতিমার স্থাপন, তাঁহার উদার ধর্মমতের নিদর্শন। মালিহাটির সুপ্রসিদ্ধ রাধামোহন ঠাকুরের নিকট তিনি দীক্ষিত হন। রাধামোহন অত্যন্ত তেজস্বী পণ্ডিত ছিলেন। নন্দকুমার তাঁহার প্রতি অভিমান প্রকাশ করায়, তিনি অনেকদিন পর্যন্ত নন্দকুমারকে সাক্ষাৎ প্রদান করেন নাই। রাঙ্গামোহন নন্দকুমারকে বরাবরই স্নেহদৃষ্টিতে অবলোকন করিতেন; সেই জন্য তিনি তাঁহাদের পূর্ব্বপুরুষ শ্রীনিবাসা- চার্য্য কর্তৃক পূজিত সপার্ষদ মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের একখানি সুন্দর চিত্র নন্দকুমারকে প্রদান করিয়াছিলেন।
Leave a Reply