শ্রী নিখিলনাথ রায়
অদ্যাপি সেই চিত্র নন্দকুমারের দৌহিত্রবংশীয় কুঞ্জঘাটা রাজবংশীয়গণের নিকট বর্তমান আছে। তাঁহারা প্রত্যহ তাঁহার পূজা করিয়া থাকেন। বঙ্গের যাবতীয় ব্রাহ্মণপণ্ডিতগণ তাঁহার নিকট হইতে বহু সাহায্য লাভ করিতেন। নবদ্বীপ প্রভৃতি স্থানের প্রধান পণ্ডিতগণকে তিনি রীতিমত প্রতিপালন করিতেন। বৈষ্ণব ও দরিদ্রের পক্ষেও তিনি মুক্তহস্ত ছিলেন। তাঁহার পূর্ব্বপুরুষগণ সামাজিক মর্য্যাদায় কিঞ্চিৎ ন্যূন হওয়ায়, তিনি একবার লক্ষ ব্রাহ্মণকে নিমন্ত্রণ করিয়া, এক মহাসমারোহময় ক্রিয়া করেন।
বঙ্গের অনেক স্থান হইতে ব্রাহ্মণগণ সমবেত হইয়া মহারাজের বাসভবন ভদ্র- পুরকে পবিত্রীকৃত করিয়াছিলেন। তাঁহাদিগব্যে যথেষ্ট সমাদরের সহিত অভ্যর্থনা ও ভোজনাদি করান হয়। কথিত আছে, কৃষ্ণনগরাধিপ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র উপস্থিত থাকিয়া সেই ক্রিয়া সম্পন্ন করিয়াছিলেন এবং নাটোরের দেওয়ান দয়ারাম ভাণ্ডারীর কার্য্যে নিযুক্ত হইয়াছিলেন।
রাজনৈতিক জগতের ন্যায় সামাজিক জগতেও মহারাজের শত্রুর অভাব ছিল না। কেহ কেহ তাঁহার প্রতি ঈর্ষ্যা প্রকাশ করিয়া ব্রাহ্মণ- গণের আদর অনাদর সম্বন্ধে গ্রাম্য কবিতাও রচনা করিয়া গিয়াছে।কিন্তু মহারাজ যে ব্রাহ্মণগণের প্রতি যথেষ্ট সমাদর করিয়াছিলেন, তাঁহা- দের পদধূলিসংগ্রহ করা তাহার জ্বলন্ত প্রমাণ। মহারাজ নন্দকুমার সেই লক্ষ ব্রাহ্মণের পদধূলি গ্রহণ করিয়া, অতীব যত্নপূর্ব্বক রক্ষা করিয়াছিলেন। অদ্যাপি সে ধূলির কতক অংশ কুঞ্জঘাটা রাজবাটীতে অবস্থিতি করিতেছে।
যিনি ব্রাহ্মণের পদধূলির জন্য লালায়িত, তাঁহার কর্তৃক নিমন্ত্রিত ব্রাহ্মণের অনাদর যে সম্পূর্ণ অসম্ভব, ইহাতে কিছুমাত্র সন্দেহ নাই। তবে এক- স্থানে লক্ষ ব্রাহ্মণের সমাবেশ হইলে, সকলের প্রতি সমান যত্ন সম্ভব হইয়া উঠা অতি কঠিন। কিন্তু মহারাজ সেই লক্ষ ব্রাহ্মণের পদধূলি লইবার জন্য তাঁহাদিগকে বিশেষ সমাদরই করিয়াছিলেন। লক্ষ ব্রাহ্মণকে ভোজন করাইবার জন্য যে সমস্ত কাঠাসন বা ছিঁড়া নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল, তাহারও ২০৪ খানি কুঞ্জঘাটা রাজবাটীতে অদ্যাপি দেখিতে পাওয়া যায়। কুঞ্জঘাটা রাজবংশীয়েরা সেই পদধূলি ও পিঁড়া কয়খানিকে যৎপরোনাস্তি মান্য করিয়া থাকেন। লক্ষ ব্রাহ্মণ যে তোরণদ্বার দিয়া মহারাজের বাটীতে প্রবেশ করিয়াছিলেন, তাহা আজিও বিদ্যমান রহিয়াছে।
Leave a Reply