শ্রী নিখিলনাথ রায়
মহারাজের দেবভক্তিও অতুলনীয় ছিল। তিনি ভদ্রপুরে নবরত্বের এক মন্দির স্থাপন করিয়া, তাহাতে লক্ষ্মীনারায়ণের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। বৃন্দাবনচন্দ্র নামে আর এক বিগ্রহও প্রতিষ্ঠিত হন। নবরত্নের মন্দিরে অনেক শিল্পকার্য্য করা হইয়াছিল; ‘এক্ষণে তাহার ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হইয়া থাকে। এতদ্ভিন্ন শিব, আকালীপুর নামক স্থানে গুহ্যকালী, গৌরীশঙ্কর প্রতিমাদ্বয়ের প্রতিষ্ঠা করিয়া তিনি আপনার সাম্প্রদায়িকতাবিহীন প্রকৃত সনাতন ধৰ্ম্মনিষ্ঠার পরিচয় প্রদান করিয়া গিয়াছেন। গুহাকালীর মন্দির অদ্যাপি বর্তমান আছে। লক্ষ্মীনারায়ণ, বৃন্দাবনচন্দ্র রাজা মহানন্দকর্তৃক ভদ্রপুর হইতে কুঞ্জঘাটার বাটীতে আনীত হইয়াছেন। নন্দকুমার ভদ্রপুরে তাঁহার রাণী ক্ষেমঙ্করীর পুণ্যার্থে রাণীসায়র নামে একটি বৃহৎ পুষ্করিণী খনন করাইয়াছিলেন।
তাহারই নিকটে রাজা গুরুদাসের নিখাত সুবৃহৎ গুরুসায়র পুষ্করিণী। সেই পুষ্করিণী দুইটি কুঞ্জঘাটার বর্তমান কুমারকর্তৃক সংস্কৃত হইয়া, অদ্যাপি বিরাজ করিতেছে। নন্দকুমারের বাসবাটীর চিহ্ন এখনও ভদ্রপুরে দেখিতে পাওয়া যায়। তাঁহার জন্মভবনের চিহ্ন ও তাঁহার নির্মিত দেওয়ানখানা অদ্যাপি বিরাজিত আছে। ১১৮১ সালের ২৯ এ ভাদ্র তাঁহার দেওয়ানখানার তীর দেওয়ালের উপরে সন্নিবেশিত হইয়াছিল।
মহারাজ নিজের চেষ্টায় যথেষ্ট ধনোপার্জন করিয়াছিলেন; কিন্তু তাহার সমস্তই সৎকার্য্যে ব্যয় করিতেন। শেষ জীবনে যদিও তিনি আর কিছু উপার্জন করিতে পারেন নাই, তথাপি মৃত্যুকালে ৫২ লক্ষ টাকা সঞ্চিত রাখিয়া যান।। তাঁহার পুত্র রাজা গুরুদাস সেই সমস্তের উত্ত- রাধিকারী হইয়াছিলেন। মহারাজ নন্দকুমারের এক পুত্র ও তিন কন্যা ছিল, পুত্রের নাম রাজা গুরুদাস। তিনি গৌড়াধিপতি উপাধি প্রাপ্ত হন।
কন্যা তিনটির নাম সম্মানী, আনন্দময়ী ও কিনুমণি। রতনমণি নামে তাঁহার কোন কন্যার নাম শুনা যায়; উক্ত তিন কন্যার মধ্যে কাহারও নাম রতনমণি ছিল, অথবা রতনমণি তাঁহার অন্য এক কন্যা ছিলেন, তাহা আমরা অবগত নহি। তাঁহার কন্যা সম্মানীর সহিত কুঞ্জঘাটা রাজবংশের আদিপুরুষ জগচ্চন্দ্রের বিবাহ হয়। নন্দকুমারের কোন্ কন্যার সহিত তাঁহার প্রিয় জামাতা রায় রাধাচরণের বিবাহ হইয়া- ছিল, তাহাও বলিতে পারা যায় না।
Leave a Reply