শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন

বিজয় দিবসে বিজয়ী জাতি ভাবনা

  • Update Time : সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১.২৬ এএম

একটি জাতিকে সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয়কে মনে রাখতে হয়, তাকে স্মারক হিসেবে স্মরণ করতে হয়- মূলত তার ভবিষ্যত প্রজম্মের জন্যে। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে তার সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয়ের স্মারক ১৬ ডিসেম্বর। ওই দিন ৪.৫২ মিনিটে যখন বাংলাদেশ- ভারত যৌথ বাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিত্‌ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী’র পূর্বখন্ডের প্রধান জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পন করেন ওই মুহূর্তটি বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের ২২ বছরের সংগ্রামের শেষে বিজয়ের শীর্ষ বিন্দুকে  ছোঁয়া। 

একটি বিজয়ের ভেতর অনেক আকাঙ্খার প্রকাশ থাকে। মানুষের এই আকাঙ্খার সকল দিক জানতে হলেও মানুষকে অনেক পথ হাঁটতে হয়। তারপরেও সেদিন ওই বিজয়ের অন্যতম দিক ছিলো- শুধু একটি ধর্মের মানুষের জন্যে যে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিলো সেখান থেকে এই ভূখন্ড বের হয়ে আসা। তাই ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের ভেতর দিয়ে এই সত্যটি এ ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়- এ দেশটি সকল ধর্মের, সকল বর্নের , সকল নৃগোষ্টির মানুষের। অর্থাত এ ভূমিতে ধর্মের নামে, বর্ণের নামে, বড় বা ছোট নৃগোষ্টির নামে যখনই কেউ কোন বঞ্চনার বা নিরাপত্তাহীনতার ঘটনা যদি কখনও ঘটে তখন ধরে নিতে হবে- দেশ তার বিজয়ের চেতনা থেকে সরে এসেছে। সরে এসেছে বিজয়ী জাতি ভাবনা থেকে।

আর বিজয়ের চেতনা থেকে সরে আসার অর্থই হলো কোন না কোন উগ্রতার ভেতর প্রবেশ করা। একটি বিজয়ী জাতির সঙ্গে কখনই কোন উগ্রতা মানায় না। বিজয়ী জাতিকে সব সময়ই শান্ত হতে হয়। যখনই কোন উগ্রতা প্রবেশ করে, যখনই জাতির কোন অংশ দেশ ও জাতিকে উগ্রতার মধ্যে ঠেলে দেবার চেষ্টা করে তখনই ধরে নিতে হয়, ওই অংশটি জাতিকে তার বিজয়ের মূল লক্ষ্য থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করছে- যা জাতির জন্যে ভয়ংকর। কারণ, মূল স্তম্ভে আঘাত করার অর্থই হলো নিজের পায়ে আঘাত করা।

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাঙালির এই বিজয় দিবসের উচ্ছাসের মূলে ছিলো দেশের সকল মানুষ নিরাপত্তাহীনতা থেকে বের হয়ে এসেছিলো, প্রকৃত আইনের শাসনের পথে চলার সৃষ্টি করেছিলো। ৫৪ বছরে এখনও সেই আকাঙ্খা বাস্তবায়িত হয়নি। সব সময়ই কিছু না কিছু মানুষ নানান ভাবে অনিরাপদ থেকে গেছে তাই সে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, বাক স্বাধীনতার নিরাপত্তা বা খাদ্য ও আশ্রয়ের নিরাপত্তা হোক।

একটি জাতিগোষ্টিকে বিজয়ী হবার পরেও তাকে অনেক ভুল ও শিক্ষাগ্রহনের মধ্য দিয়ে সামনে এগুতে হয়। আর প্রতিটি বিজয় দিবসে এ সত্য মনে করতে হয়, আজ অবধি যে ভুলগুলো আমরা চিহ্নিত করেতে পেরেছি সেগুলো যেন আর ভবিষ্যতে না ঘটে। আর যেন ভুলকে ভুল দিয়ে না ঢাকা হয়। জাতি যেন সত্য অর্থে ভুল চেনার মতো ধীর স্থির মস্তিস্ক অর্জন করতে পারে।

সর্বোপরি আজকের এই বিজয় দিনে শুধু নয় সব সময়ই মনে রাখা দরকার, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের রাজধানী মুজিবনগর থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে একটি গান প্রচারতি হতো- যার একটা লাইনের অর্থ ছিলো- সকলের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবো অন্ন। বাস্তবে সেইদিনই বিজয় পরিপূর্ণতা লাভ করবে সকলের ঘরে ঘরে যখন প্রয়োজনীয় খাদ্য থাকবে। আর এই সকলের ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছে দেবার অঙ্গীকারের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর সাড়ে চার লাখেরও বেশি মা বোনের আব্রু।

রক্ত দিয়ে, আব্রু দিয়ে কেনা এ বিজয় শত প্রতিকূলতার মাঝেও এগিয়ে চলেছে ৫৪ বছর ধরে- এর অগ্রযাত্রা ধাবমান থাকুক সুর্যের গতিসম- এই হোক এ বিজয় দিবসের অঙ্গীকার।

আজকের এই বিজয় দিবসে সারাক্ষণ এর পক্ষ থেকে দেশবাসী ও আমাদের সকল পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভার্থীদের জানাই বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024