সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৩৩ অপরাহ্ন

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১১৭)

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

শশাঙ্ক মণ্ডল

সাহিত্য

পঞ্চম অধ্যায়

সন্দেশখালী থানার খুলনা গ্রামের জমিদার কলকাতার বিখ্যাত লাহারা। তাদের নামে খুলনা পি.সি. লাহা বিদ্যালয়। প্রজারা আশা করেছিলেন জমিদারের নামে স্কুল করলে সাহায্য পাওয়া যাবে বিদ্যালয় কিন্তু কোনদিন তাদের কাছ থেকে সাহায্য পায়নি – স্বাধীনতার পরে জমিদারী উঠে গেলে কাছারি বাড়িটা স্কুল কর্তৃপক্ষ কিনে নেয় তৎকালীন বাজার দরে। ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ভাঙড় হাইস্কুলের প্রথমযুগের কথা বলতে গিয়ে প্রধানশিক্ষক শুকুর আলি তরফদার লিখেছেন ‘ইংরেজ আশ্রিত জমিদার তালুকদাররা ছিলেন গ্রামের বিত্তবান দণ্ডমুণ্ডের কর্তা।

কিন্তু শিক্ষার আলোকে বড় ভয় করতেন তাঁরা, চাষি- বাসি প্রজার ছেলেরা লেখাপড়া শিখলে চোখ ফুটে যাবে; শাসন শোষণের বড় অসুবিধা’। প্রতিষ্ঠাতা গোলামএহিয়ার জন্ম তাঁতির ঘরে ছোটব্যবসায়ী এগিয়ে এলেন গ্রামের কয়েকজন উৎসাহী শিক্ষিত যুবক- স্বদেশি আন্দোলনের ছোঁয়া তাদের মনে। তারা ভাঙড় স্কুল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে গোলাম এহিয়াকে সাহায্য করলেন; (৩) স্কুলের জন্য সরকারি সাহায্য নেই- স্থানীয়ভাবে পরিকল্পনা নেওয়া হল-হাওড়া হাট কমিটি করা হল।

যে সব ব্যাপারী ভাঙড় ও তার পাশ্ববর্তী এলাকা থেকে হাওড়ার মঙলাহাটে কাপড় নিয়ে যাবে, তারা প্রতি পিস কাপড়ের জন্য স্কুলবৃত্তি দেবেন। শ্যামবাজার মোটরলঞ্চ সিন্ডিকেট স্কুলের জন্য যাত্রী প্রতি দু-পয়সা আদায় করবে- এ ছাড়া স্থানীয় দোকানদার ও মানুষরা চাঁদা দিতেন। এটা শুধু ভাঙড় হাইস্কুলের প্রথমযুগের কথা নয়, সুন্দরবনের প্রতিটি এলাকায় স্কুলের প্রতিষ্ঠার পিছনে এধরণের সাহায্যের কথা জানা যাবে। ১৯৩৫- ৩৬ সালে কাকদ্বীপে বিদ্যালয় করার ব্যাপারে এগিয়ে এসেছেন দিন্দারা; এদের সঙ্গে গ্রামের যোগাযোগ ছিল এবং জমিদার হিসাবে এঁরা খুব বড় ভূ-সম্পত্তির মালিক ছিলেন না।

বসিরহাট মহকুমার সুন্দরবনাংশে ভবানীপুর এস. জে., দুলদুলী হাইস্কুল, সাহেবখালি নিত্যানন্দ হাই, রামেশ্বরপুর হাই কিংবা ভেবিয়া হাইস্কুল। সবই বিশ শতকের তৃতীয় দশকে শুরু হল। এ সব স্কুল প্রতিষ্ঠার পিছনে স্থানীয় ছোট ভূ-স্বামীদের উৎসাহ কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছিল। কলকাতা কেন্দ্রিক বড় বড় জমিদাররা প্রজাদের শিক্ষার ব্যাপারে সাধারণভাবে কোন ভূমিকা নেয়নি বরং এসব স্কুল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে স্থানীয় ছোট ভূ-স্বামী, শিক্ষানুরাগী, স্বদেশিব্যক্তিদের ভূমিকা প্রধান হয়ে দেখা দিয়েছিল।

১৯১০ সালের সরকারি তথ্যে লক্ষ করা যাচ্ছে সারা বাংলাদেশে মোট ৮৪৬ টি হাইস্কুলের মধ্যে ৪৪ টি সরকারি বিদ্যালয়- বাদ বাকী ৮০২ টি বেসরকারি বিদ্যালয় এবং এসব বেসরকারি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৭৭ টি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত, বাকি ৫২৫ টি সরকারের কাছ থেকে কোন সাহায্য পায় না। এসব বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন মাসিক ৫ টাকা থেকে ৭৮ টাকা। সরকারি তথ্যেই স্বীকার করা হয়েছে অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন একজন কুলির মাসিক আয়ের এক তৃতীয়াংশ।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024