ম্যাকসিম গোর্কী
একটি চিঠি
কনস্টবলের দ্বারা যে রাষ্ট্রের পত্তন ঘটেছিল সেই রাষ্ট্রের। একথা শুনে অধিকাংশ সাধু নাগরিক বিস্মিত হ’য়ে পড়বেন। তাঁরা আরো শুনে বিস্মিত হবেন যে, এই ভ্রাম্যমানেরা যখন এমন একটি স্থানে এসে পড়ল যা পার হয়ে আর অগ্রসর হবার ঠাঁই রইল না, তখন তারা থেমে গিয়ে শুরু করল বসবাস।
এই ছিল আমাদের ভাগ্য- আমাদের অমোঘ দুর্লংঘ্য নিয়তি, আমরা বনাকীর্ণ এর্জা, চুড, মেরে, ভেস এবং মুরোমার আশেপাশে বরফ আর জলাভূমিতে আমাদের আস্তানা গাড়লাম। তবু এমন সব মানুষের অভ্যুদয় ঘটল, যাঁরা উপলব্ধি করলেন যে আলো পূর্ব থেকে আসবে না, আসবে পশ্চিম থেকে। তারপর আজ তিনি-আমাদের সুপ্রাচীন ইতিহাসের মুকুটমণি, সচেতন ভাবেই হ’ক কিম্বা অচেতন ভাবেই হ’ক, এক বিরাট পর্বতের অন্তরায় রূপে স্থাপন করলেন আপনাকে-আমাদের জাতি এবং ইউরোপের মধ্যবর্তী পথে; আমাদের জাতি এবং সক্রিয় জীবনের পথে-যে সক্রিয় জীবন কঠোর ভাবে দাবী করে মানুষের সম্পূর্ণ মানসিক শক্তিকে।
বিজ্ঞানের প্রতি তাঁহার যে মনোভাব, তা-ও যে স্বজাতীয়, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই; প্রচীন রাশিয়ার অজ্ঞতা-প্রসূত গ্রাম্য সংশয়বাদ তাঁর মধ্যে মহা সমারোহে প্রতিফলিত হয়েছিল, তা স্পষ্টই বোঝা যায়। তাঁর মধ্যে যা কিছু রয়েছে, তা সর্বভাবে স্বজাতীয়। তাঁর মতবাদ অতীতের প্রতিক্রিয়া, অতীতের উত্তরাধিকার মাত্র; আর ইতিপূর্বেই তাকে আমরা ঝেড়ে ফেলতে শুরু করেছি।
“বুদ্ধিজীবী, রাষ্ট্র এবং জনসাধারণ” নামে যে পত্রখানি তিনি ১৯০৫ সালে লিখেছিলেন, তা কীরকম অনিষ্টকর ও বিদ্বেষপ্রসূত, তা একবার ভেবে দেখ। আমি তো তোমাকে বলেছিলাম, এই ধরণের কথা দলগত পত্রের মধ্যে শুনতে পাবে। ঐ সময় আমি এই পত্রের একটি জবাব লিখি। জবাবটি তাঁর নিজের কথারই উপর ভিত্তি ক’রে লিখিত হয়। লিখিঃ রাশিয়ার জন সাধারণের সম্পর্কে বা সপক্ষে কোনো কথা বলবার অধিকার তিনি বহুদিন আগেই হারিয়েছেন।
কারণ, আমি স্বচক্ষে দেখেছি, জন সাধারণের কাছ থেকে যদি কেউ তাঁর সংগে অন্তরংগভাবে আলাপ করতে আসে, তার কথা তিনি মন দিয়ে শুনতে বা বুঝতে চান না।
Leave a Reply