সারাক্ষণ ডেস্ক
হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, ডিমেনশিয়া—এই সমস্ত শারীরিক সমস্যার মধ্যে একটি সাধারণ বিষয় হলো দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ। শরীরে প্রদাহ সাধারণত একটি উপকারী প্রতিক্রিয়া। যখন কোনো আঘাত লাগে বা সংক্রমণ হয়, তখন শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রদাহজনিত কোষ তৈরি করে, যা রোগ প্রতিরোধ, ক্ষত নিরাময় এবং বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে সাহায্য করে। কিন্তু কখনও কখনও প্রদাহ থামে না বা শরীরে থাকা স্থায়ী কোনো উত্তেজকের কারণে এটি সক্রিয় থাকে, যেমন ধূমপানের ধোঁয়া বা ধমনিতে জমে থাকা প্লাক। এমনকি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ভুল সাড়া দিতে পারে, শরীরকে বিপদের মধ্যে মনে করে যখন বাস্তবে তা নয়। এর ফলে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যা শরীরের টিস্যুগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
সঠিক খাদ্য নির্বাচন করুন
আপনার খাদ্যাভ্যাস প্রদাহ কমাতে এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা সবচেয়ে উপকারী। এতে সম্পূর্ণ শস্য, ডাল, বাদাম, বীজ এবং অলিভ অয়েলের মতো অসম্পৃক্ত চর্বি থাকে। এই খাদ্যাভ্যাসে মাছ এবং মুরগির মতো লীন প্রোটিন এবং রঙিন ফল ও সবজি অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, বেরি ও বেগুনের মতো সবজির রঙ প্ল্যান্ট নিউট্রিয়েন্টের উপস্থিতি নির্দেশ করে, যা শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, যেমন পরিশোধিত শস্য (সাদা রুটি), ডেলি মাংস, হটডগ, ডিপ ফ্রাইড খাবার এবং অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার প্রদাহ বাড়ায়। ২০২০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি প্রদাহজনক খাবার খান তাদের কার্ডিওভাসকুলার রোগ হওয়ার ঝুঁকি ৪১ শতাংশ বেশি।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
আপনার বিএমআই ২৫-এর নিচে রাখার চেষ্টা করুন এবং কোমরের মাপের প্রতি মনোযোগ দিন। “পেটের চর্বি প্রদাহের জন্য সবচেয়ে খারাপ ধরনের চর্বি,” বলছেন অধ্যাপক এডওয়ার্ড জিওভানুচ্চি। নারীদের কোমরের মাপ ৩৫ ইঞ্চির বেশি এবং পুরুষদের ৪০ ইঞ্চির বেশি হলে প্রদাহ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। তবে এশিয়ানদের মতো কিছু জাতিগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এই মাপ আরও কম হওয়া উচিত।
শারীরিক কার্যকলাপ বাড়ান
শারীরিক ব্যায়াম প্রদাহ কমাতে খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে কাজ করে। “শুধুমাত্র ব্যায়াম করে প্রদাহ কমানো সম্ভব নয়,” বলছেন ডেভিড নীমান। সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ৩০ থেকে ৬০ মিনিট পর্যন্ত দ্রুত হাঁটার মতো কার্যকলাপ প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এমনকি ২০ মিনিটের একটি দ্রুত হাঁটাও প্রদাহজনক কোষগুলিকে কমাতে কার্যকর।
ঘুম বৃদ্ধি এবং চাপ কমান
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা অতিরিক্ত চাপ থাকলে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। ভালো ঘুমের জন্য ক্যাফেইন দেরিতে গ্রহণ করবেন না, ডিনার তাড়াতাড়ি সেরে ফেলুন এবং শোবার ঘর অন্ধকার রাখুন। ধীরে ধীরে শ্বাস নেয়া এবং ছাড়া আপনাকে শিথিল করতে সাহায্য করে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকাও মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
প্রদাহ প্রতিরোধে এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে আপনি দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি হ্রাস করতে পারেন।
Leave a Reply